
ম্যানহাটানের করপোরেট ভবনে সন্ত্রাসী হামলা: ৪ জন নিহত, আহত অর্ধশতাধিক
নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটানের পার্ক অ্যাভিনিউর একটি করপোরেট ভবনে ভয়াবহ বন্দুকধারী হামলায় চারজন নিহত এবং ৫৫ জনের বেশি আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) সাহসী অফিসার দিদারুল ইসলাম। হামলাটি ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়।
হামলাকারী শেন তামুরার পরিচিতি ও ঘটনার প্রেক্ষাপট
ঘটনাস্থলে পৌঁছানো পর্যন্ত ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। ২৭ বছর বয়সী হামলাকারী শেন তামুরা লাস ভেগাস থেকে এসে হঠাৎ করেই বহুতল করপোরেট ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করেন, যা পরবর্তীতে আত্মহত্যায় শেষ হয়। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তামুরা মানসিকভাবে ভীষণ অসুস্থ ছিলেন।
দিদারুল ইসলাম: সাহসিকতার এক মূর্তি
নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ৩৬ বছর বয়সী, যিনি চার বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে নিউইয়র্ক পুলিশের ৪৭ নম্বর প্রিসিন্টে কর্মরত ছিলেন। দিদারুলের জন্ম ও শিকড় বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায়। তার পরিবারে মা-বাবা, স্ত্রী এবং দুই সন্তান রয়েছেন। স্ত্রী বর্তমানে গর্ভবতী, যা পরিবার ও সম্প্রদায়ের জন্য এক বড় ধাক্কা।
নিউইয়র্ক পুলিশের ইন্সপেক্টর খন্দকার আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, দিদারুল ইসলাম সাহসিকতার সঙ্গে হামলাকারীর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। হামলার খবরে দিদারুলের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এনওয়াইপিডির পক্ষ থেকে তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেসিকা টিশ বলেছেন, “এই ঘটনা আমাদের সবাইকে শোকাহত করেছে। আমরা হামলাকারীর মানসিক অবস্থার ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত চালাচ্ছি। শেন তামুরা অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল, তার কার্যক্রম যেন ভবিষ্যতে আর কেউ চালাতে না পারে সে বিষয়ে আমরা কঠোর সতর্ক।”
কমিশনার আরও জানান, ঘটনার এক ঘণ্টা আগে তামুরা নিউইয়র্ক পৌঁছান এবং দ্রুতই করপোরেট ভবনে প্রবেশ করেন। পুলিশ ও উদ্ধার কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
নিউইয়র্ক শহরের সন্ত্রাস মোকাবিলায় বিশেষ সতর্কতা
ম্যানহাটানের এই হত্যাকাণ্ডের পর নিউইয়র্ক পুলিশ সিটি জুড়ে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা প্রতিরোধে নতুন কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশে শোক ও উদ্বেগ
বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে নিহত দিদারুল ইসলামের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা নিউইয়র্কে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নিহত বাংলাদেশি অফিসারের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি।”
বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল থেকে দিদারুল ইসলামের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে এবং তার পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
দিদারুল ইসলামের জীবনের ছোট্ট ঝলক
দিদারুল ইসলাম একজন নিষ্ঠাবান পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি দেশের বাইরে থেকেও তার পেশায় উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি ব্রঙ্কস এলাকার পার্চেস্টার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন এবং পরিবারকে খুব ভালোবাসতেন। তার দুই সন্তান ও গর্ভবতী স্ত্রী জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের অপেক্ষায় ছিলেন। তার জীবন উৎসর্গ করা সাহসিকতা ও নিষ্ঠা নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের মধ্যে প্রশংসিত ছিল।
হামলার কারণ ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: এক জরুরি আলোচনার দরকার
এই হামলার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রে মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুনভাবে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সমর্থন না পেলে ভবিষ্যতে আরও এমন দুঃসহ ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
শেন তামুরার মত ব্যক্তিদের আগাম শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করা, কর্মক্ষেত্রে মনিটরিং বৃদ্ধি করা জরুরি।
ম্যানহাটানে ঘটে যাওয়া এই নৃশংস হামলায় এক সাহসী বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার জীবন ক্ষতি হওয়া একটি গভীর দুঃখজনক ঘটনা। দিদারুল ইসলামের আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সাহস ও কর্তব্যবোধে মানুষ কতটা উজ্জ্বল হতে পারে। নিউইয়র্ক পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে এই ঘটনার মাধ্যমে সম্পর্ক ও সহমর্মিতার নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হবে। দিদারুল ইসলামের স্মৃতি চিরকাল বাঙালি জাতির হৃদয়ে অমলিন থাকবে।
MAH – 12012, Signalbd.com