ফিলিস্তিনের স্বাধীন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) হামাসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও স্বপ্নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পশ্চিমা বিশ্বের এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি ও পবিত্র স্থানগুলোতে অধিকার এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম, অটলতা ও আত্মত্যাগের ফলস্বরূপ এই স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই স্বীকৃতিকে শুধুমাত্র প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে নয়, বরং বাস্তবতায় রূপান্তরিত করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গাজ্জা উপত্যকায় চলমান নৃশংস গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা এবং পশ্চিম তীর ও আল-কুদস দখল ও ইহুদিকরণ পরিকল্পনার মোকাবিলা।
হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ইসরাইলকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে এবং সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া, ইসরাইলি নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। বিবৃতিতে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘনের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়াবহ অপরাধের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামের প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিনি জনগণ বহু দশক ধরে স্বাধীনতা ও সুরক্ষিত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফিলিস্তিনি জনগণ নানা ধরনের দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। গাজ্জা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর আজও বহু বছর ধরে সন্ত্রাস, অবৈধ দখল ও সীমাহীন রণনীতি’র মুখোমুখি।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বিশেষ করে গাজ্জা উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকট, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহের অভাব, এবং নৃশংস হিংসা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার সিদ্ধান্তের গুরুত্ব
পশ্চিমা বিশ্বের এই তিনটি দেশের স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের জন্য কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি প্রমাণ যে, বিশ্বের কিছু উন্নত রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের স্বপ্ন ও অধিকারকে সম্মান জানাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই স্বীকৃতি ইসরাইলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে আরও চাপ তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের স্বীকৃতি শুধু প্রতীকী নয়; এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি, মানবাধিকার এবং আইনি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফিলিস্তিনি জনগণ দীর্ঘদিন ধরে শান্তি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালাচ্ছে, এবং এ ধরনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তাদের ন্যায্য দাবিকে শক্তিশালী করবে।
হামাসের আহ্বান: ইসরাইলকে বিচ্ছিন্ন করা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা
হামাস ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদার রাষ্ট্রকে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আদালত ও সংস্থাগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ করে গাজ্জা ও পশ্চিম তীরের দখল প্রক্রিয়া, ইহুদিকরণ পরিকল্পনা এবং পবিত্র আল-কুদসের ওপর ইসরাইলের অবৈধ নিয়ন্ত্রণকে বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনি স্বীকৃতি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন। কিছু দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অন্যান্য দেশকে অনুরোধ করেছে এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে। জাতিসংঘের কিছু সংস্থা এবং মানবাধিকার সংস্থা ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ফিলিস্তিনের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। এটি কেবল রাজনৈতিক প্রভাবই নয়, বরং মানবিক ও সামাজিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
আল-কুদস: ফিলিস্তিনির পবিত্র নগরী
বিবৃতিতে বিশেষভাবে আল-কুদসের উল্লেখ রয়েছে। আল-কুদস শুধু ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক রাজধানী নয়, বরং মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইয়হুদিদের জন্য পবিত্র শহর। হামাস মনে করে, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে আল-কুদসের স্থিতি অপরিহার্য। ইসরাইলের দখল ও ইহুদিকরণ পরিকল্পনা এই নগরীর ঐতিহ্য ও পরিচয়কে বিপন্ন করছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামের সম্মান
হামাসের বিবৃতি শেষ হয় ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে সম্মান জানিয়ে। বলা হয়েছে, এই স্বীকৃতি তাদের দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের স্বীকৃতি। তবে বাস্তব পরিবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফিলিস্তিনি জনগণ আশা করছে, এই স্বীকৃতি তাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন দেবে। গাজ্জা, পশ্চিম তীর ও আল-কুদসের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবিক সুরক্ষার অভাবে ভুগছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংস্থাগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
MAH – 12954 I Signalbd.com
				
					


