চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, আগামী রোববার ফের শুনানি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেফতার হওয়া ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন স্থগিতের আদেশ অবশেষে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। ফলে আপাতত তার জামিন বহাল থাকলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী রোববার, ৪ মে বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবারও শুনানি হবে।
হাইকোর্টে জামিন, কিছুক্ষণের ব্যবধানে স্থগিত, পরে প্রত্যাহার
বুধবার (৩০ এপ্রিল) হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ—বিচারপতি আতোয়ার রহমান খান ও বিচারপতি আলী রেজা—চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের করা জামিন আবেদনের শুনানি শেষে তাকে জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু জামিন আদেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাষ্ট্রপক্ষ তা চ্যালেঞ্জ করে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে, যেখানে জামিন স্থগিত করা হয়।
কিন্তু একই দিন সন্ধ্যায় চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. রেজাউল হক জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে চিন্ময়ের জামিন আপাতত বলবৎ রয়েছে। তবে রাষ্ট্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে রোববার।
কী ছিল মামলার প্রেক্ষাপট?
২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস। ওই সমাবেশকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয় এবং পরে, ৩১ অক্টোবর, তার বিরুদ্ধে “জাতীয় পতাকা অবমাননার” অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়। একই মামলায় চিন্ময়সহ মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
এরপর ২২ নভেম্বর, চিন্ময়ের নেতৃত্বে রংপুরে আরেকটি বড় ধর্মীয় সমাবেশ হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। কিছুদিন পর, ২৫ নভেম্বর, তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন আদালতে হাজির করলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
হাইকোর্টের রুল এবং সেটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি
চিন্ময় দাস জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করলে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি আদালত রুল জারি করেন। রুলে বলা হয়, কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চায় আদালত। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলটি “অ্যাবসলিউট” ঘোষণা করে তাকে জামিন দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আপত্তি ও আইনি লড়াই
হাইকোর্টের আদেশে অস্বস্তি প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষ দ্রুত সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে যায় এবং জামিন স্থগিতের আবেদন করে। তারা আদালতে যুক্তি তুলে ধরে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রের প্রতীক ও ঐক্যের বিরুদ্ধে, যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
পরবর্তী করণীয় ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এখনো জামিন স্থায়ী নয়। আগামী ৪ মে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই জামিন আদেশ নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হবে। তাতে হাইকোর্টের জামিন আদেশ বহাল থাকবে কিনা, কিংবা নতুন আদেশ আসবে কিনা—তা তখনই জানা যাবে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকরা বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অন্যদিকে, সরকারপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিন দিলে ভুল বার্তা যাবে’।
মামলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব
বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বরাবরই সংবেদনশীল বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে যখন তা ধর্মীয় বা জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তা আরও আলোচিত হয়ে ওঠে। চিন্ময় দাসের মামলাটিও তেমনই একটি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, একটি ধর্মীয় সমাবেশে জাতীয় পতাকার সঠিক ব্যবহার না হওয়া ও বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
এনজিও ও মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, চিন্ময় দাসের মতাবলম্বীরা যাতে ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় রেখে মত প্রকাশ করতে পারে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যদিকে তারা এটিও বলছে, যদি কোনো ব্যক্তি সত্যিই রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজে যুক্ত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত, যেন তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রূপ না নেয়।
সংক্ষেপে মূল পয়েন্ট:
- চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আদেশ আপাতত বলবৎ।
- জামিন স্থগিতের আদেশ চেম্বার আদালত প্রত্যাহার করেছে।
- চূড়ান্ত শুনানি হবে ৪ মে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে।
- মামলা রাষ্ট্রদ্রোহ, জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ধর্মীয় সমাবেশকে ঘিরে।
- হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন ৩০ এপ্রিল, দীর্ঘ শুনানি শেষে।
- গ্রেফতার হয়েছিলেন ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ঢাকা থেকে।