বাংলাদেশে সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে হলে বৈধ কাগজপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সড়ক কর (ট্যাক্স টোকেন) এবং বিমা (Insurance)। কর সময়মতো নবায়ন না করলে ট্রাফিক পুলিশ জরিমানা করতে পারে। একইসঙ্গে দুর্ঘটনা বা চুরির মতো পরিস্থিতিতে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে মোটরসাইকেল বিমা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
মোটরসাইকেলের কর কত দিতে হয়
বাংলাদেশে একজন মোটরসাইকেল মালিককে প্রথম নিবন্ধনের সময় ১০ বছরের কর দিতে হয়। তবে চাইলে দুই বছর পর পর কিস্তির মাধ্যমে কর পরিশোধ করা যায়।
- ১০০ সিসির বেশি মোটরসাইকেল: ১০ বছরে ১১,৫০০ টাকা (প্রতি ২ বছরে ২,৩০০ টাকা করে কিস্তি)
- ১০০ সিসির নিচের মোটরসাইকেল: ১০ বছরে ৫,৭৫০ টাকা (প্রতি ২ বছরে ১,১৫০ টাকা করে কিস্তি)
- অতিরিক্ত ফি (এফএএফ – Financial Assistance Fund): এককালীন ১,১৫০ টাকা (২০২৩ থেকে কার্যকর)
অর্থাৎ, একটি মোটরসাইকেলের পূর্ণ ১০ বছরের কর + এফএএফ মিলে খরচ হয় গড়ে ৬,৯০০ থেকে ১২,৬৫০ টাকা (সিসি অনুযায়ী ভিন্ন হবে)।
ট্যাক্স টোকেন নবায়নের নিয়ম
ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হলে নতুন করে আবেদন করতে হয়।
- আবেদনের ফি: ২৩ টাকা
- এফএএফ ফি: ১,১৫০ টাকা
- মোটরসাইকেল বিআরটিএ অফিসে নিয়ে গিয়ে পরিদর্শক পরীক্ষা করবেন
- সবকিছু ঠিক থাকলে নতুন টোকেন ইস্যু করা হবে
টোকেন ২ থেকে ৫ বছরের জন্য নবায়ন করা যায়।
কর জমা দেওয়ার জায়গা ও ব্যাংক
আগে শুধু ব্যাংকের মাধ্যমে কর জমা দেয়া যেত। এখন অনলাইনে বিকাশ, নগদ বা ভিসা কার্ড দিয়েও সম্ভব।
সরাসরি জমা দেওয়া যায় এমন ব্যাংকসমূহ:
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড
- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
- স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড
- এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড
- এসবিএসি ব্যাংক লিমিটেড
- মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড
- মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড
- এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড
- ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড
- ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড
বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টাল থেকে জেলা অনুযায়ী নির্দিষ্ট শাখার তথ্য পাওয়া যায়।
অনলাইনে কর পরিশোধের পদ্ধতি
বিআরটিএ অনলাইন সার্ভিস (www.bsp.brta.gov.bd) থেকে ঘরে বসেই ট্যাক্স টোকেন নবায়ন করা যায়।
ধাপে ধাপে কর পরিশোধ প্রক্রিয়া:
- ওয়েবসাইটে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করুন
- ভেহিকল ইনফরমেশন অপশনে যান
- বাইকের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রোড পারমিট, ট্যাক্স টোকেনের তথ্য দেখুন
- মেয়াদ শেষ হলে লাল চিহ্ন দেখাবে
- রিনিউয়াল অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় ফি দেখুন
- মোবাইল নম্বর দিয়ে বিকাশ/নগদ/ভিসা কার্ড সিলেক্ট করুন
- পেমেন্টের সময় ঠিকানা দিয়ে দিন
- ৫–৭ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন টোকেন কুরিয়ারে পৌঁছে যাবে
বিকাশে পরিশোধ করলে অতিরিক্ত ৩৪ টাকা সার্ভিস চার্জ দিতে হয়।
মোটরসাইকেলের বিমা কেন জরুরি
বাংলাদেশে আইন অনুযায়ী মোটরসাইকেলের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক। দুর্ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের ক্ষতি হলে বিমা ক্ষতিপূরণ দেয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- ব্লু বুক
- রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
- ড্রাইভিং লাইসেন্স
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
- দুই কপি ছবি
- মোটরসাইকেল কেনার কাগজ
মোটরসাইকেলের বিমার ধরন ও খরচ
১. তৃতীয় পক্ষ বিমা (Third Party Insurance)
- মেয়াদ: ১ বছর
- খরচ: ২০০ টাকা (প্রথমবার), নবায়নে ২২৫–২৩০ টাকা
- কভারেজ: দুর্ঘটনায় অন্যের ক্ষতি বা আহত হলে ক্ষতিপূরণ
২. কম্প্রেহেন্সিভ বিমা (Comprehensive Insurance)
- খরচ: প্রায় ১০,০০০ টাকা
- কভারেজ: তৃতীয় পক্ষ + নিজের মোটরসাইকেলের ক্ষতি, চুরি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ
- অধিক নিরাপদ, তবে খরচ বেশি হওয়ায় সাধারণ বাইকাররা এটি কম নেন
বিমার খরচ ও কভারেজ নির্ধারণ করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (IDRA)।
কোথায় বিমা করা যায়
বাংলাদেশে বেশ কিছু অনুমোদিত কোম্পানি মোটরসাইকেলের বিমা সেবা দেয়। যেমন:
- প্রভাতি ইনস্যুরেন্স
- সেনা ইনস্যুরেন্স
- গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স
- ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স
- অন্যান্য অনুমোদিত বিমা কোম্পানি
কর ও বিমা না করলে ঝুঁকি কী?
- ট্যাক্স টোকেন ছাড়া মোটরসাইকেল চালালে ট্রাফিক পুলিশ জরিমানা করতে পারে
- দুর্ঘটনায় তৃতীয় পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে মালিককে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়
- বিমা ছাড়া চুরি বা বড় দুর্ঘটনায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি হতে পারে
একজন মোটরসাইকেল মালিকের জন্য কর ও বিমা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক কর বৈধভাবে রাস্তায় চালানোর অনুমতি দেয়, আর বিমা আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
১০ বছরের কর একসঙ্গে বা কিস্তিতে দেয়া যায়। অনলাইনে বিকাশ-নগদ ব্যবহার করে সহজেই ট্যাক্স টোকেন নবায়ন করা সম্ভব। আর তৃতীয় পক্ষ বিমা নিলে অল্প খরচে আইনগত সুরক্ষা পাওয়া যায়, যদিও পূর্ণ নিরাপত্তার জন্য কম্প্রেহেন্সিভ বিমা উত্তম।
অতএব, মোটরসাইকেল কিনলে শুধু রেজিস্ট্রেশন করাই যথেষ্ট নয়—সময়সীমা অনুযায়ী কর ও বিমা নবায়ন করে নেওয়াই একজন দায়িত্বশীল বাইকারের পরিচয়।
MAH – 12397 , Signalbd.com



