হাদিসে বর্ণিত এমন দুটি সহজ আমল রয়েছে, যা নিয়মিত পালন করতে পারলে জান্নাত লাভ নিশ্চিত বলে জানানো হয়েছে। এ দুটি আমল যতই সহজ হোক না কেন, বাস্তবে তা ধারাবাহিকভাবে পালন করা অধিকাংশের পক্ষেই কঠিন হয়ে পড়ে।
দুনিয়াতে পরীক্ষা, আখিরাতে প্রতিদান
পবিত্র কোরআনে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে, দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং এটি মুমিনের জন্য পরীক্ষা। এই পৃথিবীতে মানুষের প্রত্যেকটি কাজই বিচার হবে কেয়ামতের দিনে। আল্লাহতায়ালা বলেন, “জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।” (সুরা কাহাফ: আয়াত ৭)
একইসঙ্গে আরও বলা হয়েছে, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং কেয়ামতের দিন তাদের পূর্ণ মাত্রায় প্রতিদান দেওয়া হবে। যে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেল এবং জান্নাতে প্রবেশ করলো, সে-ই সফলকাম। আর দুনিয়ার জীবন প্রতারণার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।” (সুরা ইমরান: আয়াত ১৮৫)
এই দুনিয়াতে আমাদের কাজই নির্ধারণ করবে আখিরাতে আমাদের ঠিকানা—জান্নাত না জাহান্নাম।
রাসুল (সা.) জান্নাতের নিশ্চিত আমলের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য এমন অনেক সহজ আমল শিক্ষা দিয়েছেন, যেগুলো পালন করলে জান্নাত লাভ করা যায়।
হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: “দুটি অভ্যাস এমন আছে, যদি কোনো মুসলিম তা আয়ত্ত করতে পারে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। এগুলো সহজ হলেও তা আমলকারীর সংখ্যা খুবই কম।”
এই হাদিসের মাধ্যমে নবীজি এমন দুটি ছোট্ট আমল বর্ণনা করেছেন, যা নিয়মিত পালন করলে জান্নাত লাভ নিশ্চিত।
আমল-১: প্রত্যেক সালাতের পর ১০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০ বার আলহামদুলিল্লাহ, ১০ বার আল্লাহু আকবার
প্রথম আমলটি হলো—প্রতিটি নামাজের পর ১০ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলা। অর্থাৎ, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে মোট ১৫০ বার জিকির হয়, যা মিজানে (আমলনামায়) হবে ১৫০০ সওয়াব।
রাসুল (সা.) বলেছিলেন, “আমি নিজে হাতে গুণে এ জিকির করতাম।”
এটি একদিকে সহজ, আবার অন্যদিকে অত্যন্ত কার্যকর। কিন্তু দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারণে আমরা অনেকে এটি করতে ভুলে যাই অথবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এ ছোট্ট আমলটিও করতে পারি না।
আমল-২: ঘুমানোর আগে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার
দ্বিতীয় আমলটি হলো—রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ১০০ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পাঠ করা।
এটি মুখে উচ্চারণ করলে হয়তো কেবল ১০০ বার, কিন্তু আমলনামায় এর প্রতিফল হবে ১০০০ গুণ সওয়াব। অর্থাৎ, একজন মানুষ রাতেই পেতে পারেন হাজারো সওয়াব, শুধু ঘুমানোর আগে এই ছোট্ট জিকিরগুলো করলেই।
রাসুল (সা.) প্রশ্ন করেছিলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে প্রতিদিন ২৫০০ গুনাহ করে?”
অর্থাৎ, যদি গুনাহ না-ই করি, তবুও এ সওয়াবগুলো আমাদের আমলনামা ভারী করতে পারে এবং জান্নাতের পথ প্রশস্ত করতে পারে।
কেন এই দুই আমল অনেকেই আয়ত্ত করতে পারে না?
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, শয়তান তখন আসে এবং বিভিন্ন চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়—এইটা মনে করো, ওটা করো। ফলে সালাতের পর জিকির ভুলে যায়। আবার রাতে শোয়ার সময়ও শয়তান এসে তাকে ঘুমের দিকে টেনে নেয়, ফলে সে ঘুমিয়ে যায় এবং আমলগুলো করতে পারে না।”
শয়তান আমাদের এমন কাজ থেকে বিরত রাখতে সর্বদা চেষ্টা করে যা আমাদের নেক আমলের দিকে নিয়ে যায়। তাই সচেতনভাবে এ দুটি আমল আমাদের জীবনে স্থায়ী করতে হবে।
এই দুই আমলের উপকারিতা ও ফজিলত
- জিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণ হয়, যা কোরআনের ভাষায়—”নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।”
- গুনাহ মাফের পথ খুলে যায়, কারণ একেকটা জিকির হাজার গুনাহ মাফ করাতে সক্ষম।
- আমলনামা ভারী হয়, যা কেয়ামতের দিন নাজাত পাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
- নামাজ ও ঘুমের মতো সময়ের ব্যবধানে করা যায়, তাই ব্যস্ততম জীবনেও এ দুটি আমল বাস্তবায়ন সম্ভব।
শেষ কথা
জান্নাতের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বড় কোনো ত্যাগের প্রয়োজন নেই সবসময়। কিছু ছোট্ট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমল আমাদের নাজাতের পথ তৈরি করে দিতে পারে।
এ দুটি আমল যেমন সহজ, তেমনি ফলপ্রসূ। তবে নিয়মিত পালন করাই চ্যালেঞ্জ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ দুটি সহজ আমল নিয়মিতভাবে পালন করার তাওফিক দিন।
আপনি কি আজই এই দুটি আমল শুরু করবেন? নাকি আবার শয়তানের ধোঁকায় পিছিয়ে পড়বেন?
এম আর এম – ০৪৯১ , Signalbd.com



