বাংলাদেশ

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: ডিএনএ পরীক্ষায় ৫ জনের পরিচয় শনাক্ত

Advertisement

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত দুর্ঘটনায় নিহত সাতজনের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় পুলিশের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে। এই গৌরবময় অভিযান চালিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। যদিও বিস্তারিত তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

মাইলস্টোন দুর্ঘটনার পটভূমি

গত সোমবার দুপুরে একটি যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দোতলা ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় প্রথমদিকে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩১ জন এবং আহত ১৬৫ জন। তবে সময়ের সাথে সাথে আরও দুজন আহতের মৃত্যু হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে।

এরপর আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নিহতের সংখ্যা ছিল ২৯ জন। পরে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও একজনের মৃত্যু হয়, ফলে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে। আহতদের মধ্যে এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৪ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১১ জন সিএমএইচে এবং একজন শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ডিএনএ পরীক্ষার গুরুত্ব ও সিআইডির ভূমিকা

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগুনে ঝলসে যাওয়ায় সাতজনের পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পুলিশের সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আজ সিআইডির গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও সিআইডির কর্মকর্তা জানান, অবশিষ্ট মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা অপরিহার্য ছিল। এটি হতাহতের পরিবারের জন্য বড় এক স্বস্তির খবর।

দুর্ঘটনার পর সরকারের পদক্ষেপ ও উদ্ধারকাজ

বিমান দুর্ঘটনার পর সরকারি তরফ থেকে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়। ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে উদ্ধার ও অগ্নিনির্বাপণ কাজ চালানো হয়। আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার তদন্তে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করবে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তারা বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করছে।

নিহত ও আহতদের পরিবারে শোক, সামাজিক প্রতিক্রিয়

মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারগুলো গভীর শোকে ডুবে রয়েছে। তারা ক্ষোভ ও শোক প্রকাশ করেছেন সরকারের প্রতি যাতে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ দ্রুত জানা যায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব, বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ জনগণ দুর্ঘটনার প্রতি দুঃখ প্রকাশ ও শোক জানিয়েছেন। তারা দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন।

দুর্ঘটনার কারণ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটি, মানবিক ভুল বা আবহাওয়া পরিস্থিতি বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তাই প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ সামনে আসবে।

সরকার এবং বিমান বাহিনী নিরাপত্তা ব্যবস্থার পুনঃমূল্যায়ন করবে এবং যুদ্ধবিমান পরিচালনায় আরও কঠোর নিয়মাবলী প্রণয়ন করবে। দুর্ঘটনা রোধে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে।

বিস্তারিত তথ্য ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিবৃতি

  • আইএসপিআর: “আমরা দুর্ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি।”
  • সিআইডি: “ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে।”
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: “চিকিৎসাধীনদের সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়া হচ্ছে এবং আহতদের সুস্থতায় কাজ করে যাচ্ছি।”

বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস ও প্রতিরোধের উপায়

বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা খুবই বিরল, কিন্তু যখন ঘটে, তখন তা বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও পাইলটদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশগুলো বিমান নিরাপত্তায় নানা ধরণের প্রযুক্তি ও নিয়ম প্রয়োগ করে থাকে, যা বাংলাদেশেও অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে।

মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনা: সবশেষ তথ্য

বিষয়সংখ্যা / বিবরণ
মোট নিহত৩০ জন
মোট আহত৫৬ জন চিকিৎসাধীন
ডিএনএ দ্বারা শনাক্ত৫ জন
দুর্ঘটনার সময়২১ জুলাই ২০২৫, দুপুর
দুর্ঘটনাস্থলমাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলে

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button