ফ্যাক্ট চেক

কিয়ামতে সর্বপ্রথম বিচার হবে মানুষ হত্যার

Advertisement

 মানুষ হত্যা ইসলামে চরম গর্হিত অপরাধ। কিয়ামতের দিন বান্দার হক সংক্রান্ত বিচারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আগে হবে এই ভয়ংকর অপরাধের হিসাব। হাদিস ও কোরআনের আলোকে জানুন কেন মানুষ হত্যার বিচার হবে সবার আগে এবং এর ভয়াবহ পরিণতি।

কিয়ামতের প্রথম বিচার হবে রক্তপাতের

ইসলাম মানুষ হত্যাকে শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং গোটা মানবজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে গণ্য করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে একাধিকবার এ গর্হিত কাজের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তায়ালার আদালতে প্রথম যে বিষয়টির বিচার হবে, তা হলো রক্তপাত, অর্থাৎ অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা।

হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“কিয়ামতের দিন বান্দাদের মধ্যে সর্বপ্রথম বিচার হবে রক্তপাত সংক্রান্ত বিষয়ে।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৭৮)

মানুষ হত্যা: কোরআনের দৃষ্টিতে

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে:
“যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যে একজন মানুষের প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকে রক্ষা করল।”
(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩২)

এ আয়াতে বোঝা যায়, একটি জীবন নিধন করা মানেই একটি জাতিকে ধ্বংস করা। মানুষ হত্যার কোনো বৈধ কারণ না থাকলে তা পরকালের কঠিন শাস্তির কারণ হবে।

ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে হত্যাকারীর জন্য

আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন:
“যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যেখানে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হবেন, তাকে অভিশাপ দিবেন এবং তার জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হবে।”
(সূরা নিসা, আয়াত: ৯৩)

এই আয়াত স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়, ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করা হলে তার জন্য ক্ষমা নেই, যদি না আল্লাহ নিজে দয়া করেন। এই অপরাধের পরিণতি শুধুই জাহান্নাম নয়, বরং আল্লাহর অভিশাপ এবং চিরস্থায়ী গজব।

কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তির করুণ প্রার্থনা

হাদিসে আছে, কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি নিজ হাতে তার হত্যাকারীকে ধরে আল্লাহর আরশের সামনে উপস্থিত করবে এবং বলবে:
“হে আমার রব! এ ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে।”
(তিরমিজি, হাদিস: ৩০২৯)

সে সময় নিহত ব্যক্তির শিরাগুলো থেকে রক্ত ঝরবে এবং সে নিজের অধিকার আদায়ের জন্য দাবি জানাবে। কোনো উকিল, বিচারক বা প্রমাণ লাগবে না—আল্লাহর আদালতে প্রত্যেকটি ঘটনার সঠিক হিসাব হবে।

নবীজির (সা.) কঠোর সতর্কবার্তা

একবার কুরবানির দিনে নবীজি (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বলেছিলেন:
“আজকের দিন, এই শহর ও এই মাস যেভাবে সম্মানিত, তেমনি তোমাদের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জতও একে অপরের কাছে সম্মানিত।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৩০)

এই বক্তব্যে তিনি হত্যার মতো কুফরির কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। মানুষ হত্যাকে শুধু সামাজিক বা রাজনৈতিক অপরাধ নয়, বরং ঈমানহীনতা ও কুফরির কাজ বলেই অভিহিত করেন।

কোনো গোষ্ঠী যদি সম্মিলিতভাবে হত্যা করে?

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যদি আসমান-জমিনের সব মানুষ মিলে এক মুমিনকে হত্যায় অংশগ্রহণ করে, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।”
(তিরমিজি, হাদিস: ১৩৯৮)

এই হাদিস প্রমাণ করে, হত্যাকাণ্ডে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা সবাই অপরাধী এবং তাদের সকলের পরিণতি ভয়াবহ।

হত্যাকারীর তওবার পরিণতি কী?

এ প্রসঙ্গে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
“হত্যার ব্যাপারে কোরআনের আয়াত রহিত হয়নি, বরং এ আয়াত এখনও কার্যকর রয়েছে। হত্যাকারীর তওবা কবুল হবে না যদি নিহত ব্যক্তি তাকে ক্ষমা না করে।”

এই কথাগুলো বুঝিয়ে দেয়, মানুষ হত্যার পাপ এতই ভয়াবহ যে সাধারণ তওবাও তা মোচন করতে পারে না, যদি না আল্লাহ নিজে ক্ষমা করে দেন অথবা নিহত ব্যক্তি বিচারপূর্বে ক্ষমা করেন।

সমাজে মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

একজন নিরপরাধ মানুষের প্রাণনাশ পুরো সমাজ ব্যবস্থার ওপর আঘাত হানে। নৈতিকতা, মানবতা, নিরাপত্তা—সব কিছু ভেঙে পড়ে। ইসলাম তাই প্রথমেই প্রাণের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়। সমাজে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সারসংক্ষেপ  

মানুষ হত্যা একটি ভয়ংকর অপরাধ যার বিচার শুধু দুনিয়ায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং আখেরাতেও এর ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। কিয়ামতের দিন যখন সব মানুষ বিচারকের সামনে দাঁড়াবে, তখন সর্বপ্রথম হিসাব হবে রক্তপাতের।
প্রশ্ন রয়ে যায়—আমাদের সমাজ কতটা নিরাপদ? আজ যদি প্রতিটি মানুষ জানত, হত্যা কেবল দুনিয়ার আইনে নয়, বরং কিয়ামতের কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করবে—তবে কি এই হিংসা, প্রতিহিংসা বন্ধ হতো?

এম আর এম – ০৩২০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button