ওষুধ খেয়েও শরীরের অসহ্য ব্যথা কমছে না? চেষ্টা করে দেখুন এই ৫টি ঘরোয়া টোটকা

দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা শরীরের ব্যথা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। ওষুধেও মিলছে না স্বস্তি? চিন্তা নেই, কিছু ঘরোয়া টোটকা রয়েছে যেগুলো যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে ব্যথা কমানোর জন্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই কার্যকর ৫টি উপায়।
শরীরের অসহ্য ব্যথা
প্রতিদিনের কাজের চাপ, শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ কিংবা কোনো অসুস্থতার পরবর্তী ধাপে শরীরের ব্যথা এখন অনেকের কাছেই সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, জ্বর, ফ্লু কিংবা ভাইরাল সংক্রমণের পর দেখা দেয় এমন এক ধরনের ব্যথা, যা সহজে যেতে চায় না। অনেকেই ব্যথা কমাতে ওষুধের ওপর নির্ভর করে থাকেন, কিন্তু সব সময় তা কার্যকর হয় না। এ অবস্থায় কিছু ঘরোয়া প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনেকাংশেই স্বস্তি এনে দিতে পারে।
১. মাছের তেল – প্রাকৃতিক প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান
মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা প্রদাহ কমাতে অসাধারণ কাজ করে। বিশেষ করে, বাতজনিত ব্যথা বা ঘাড়-পিঠে দীর্ঘমেয়াদি যন্ত্রণায় এটি কার্যকরভাবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিশ অয়েল গ্রহণ করলে একাধিক ক্ষেত্রে ব্যথা হ্রাস পায়। চিংড়ি, রুই, তেলাপিয়া, স্যামন জাতীয় মাছ, অথবা সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে এ তেল শরীরে গ্রহণ করা যেতে পারে।
২. হলুদের গুণে উপশম পেতে পারেন যন্ত্রণা থেকে
হলুদ শুধু রান্নার উপকরণ নয়, এটি একটি চমৎকার আয়ুর্বেদিক ওষুধ। এতে থাকা কুরকুমিন নামক উপাদানটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে, জয়েন্ট পেইন, মাংসপেশির ব্যথা কিংবা আর্থ্রাইটিসে এটি অনেকটাই স্বস্তি দিতে পারে। এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ কাঁচা হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে প্রতিদিন পান করলে ধীরে ধীরে উপকার মিলতে পারে।
৩. হিট থেরাপি – ব্যথা কমাতে কার্যকর একটি পদ্ধতি
হালকা গরম সেঁক শরীরের ব্যথা উপশমে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাংসপেশি টান ধরলে বা হালকা ব্যথা অনুভব করলে হট ওয়াটার ব্যাগ বা হিট প্যাডের সাহায্যে গরম সেঁক দেওয়া যায়। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং ব্যথার স্থানটি শিথিল হয়। তবে আঘাত নতুন হলে বরফ সেঁক দেওয়া উত্তম।
৪. আঙুর বা বেরিজাতীয় ফল – প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
আঙুরে থাকা ‘রেসভেরাট্রল’ নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ হ্রাসে সহায়ক। এটি কোষে কোষে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ব্যথা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন সকালে বা বিকেলের নাস্তায় একমুঠো আঙুর বা ব্লুবেরি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে দীর্ঘমেয়াদি উপকার পাওয়া যেতে পারে।
৫. আদা – ঘরোয়া ‘পেইন কিলার’
আদা বহু বছর ধরে প্রদাহজনিত ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদায় রয়েছে জিঞ্জারল নামক উপাদান, যা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে। আদা চা, কুচানো কাঁচা আদা বা আদার রস—যেকোনোভাবে প্রতিদিন গ্রহণ করলে ব্যথার উপশম পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাত, আর্থ্রাইটিস বা পেশির ব্যথায় এটি বেশ কার্যকর।
অতিরিক্ত টোটকা: স্ট্রেচিং ও হালকা ব্যায়ামেও মিলতে পারে স্বস্তি
প্রতিদিনের রুটিনে হালকা স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম যুক্ত করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং পেশিগুলো নমনীয় থাকে। এতে ব্যথা হ্রাসের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ব্যথা প্রতিরোধেও সহায়তা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালের দিকে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের স্ট্রেচিং অভ্যাস আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে রাখতে পারে।
সাবধানতা: চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
যদিও ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর, তবুও দীর্ঘমেয়াদি বা তীব্র ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ ব্যথা কোনো বড় সমস্যার উপসর্গও হতে পারে, যা সময়মতো শনাক্ত করা জরুরি।
“ওষুধে স্বস্তি না পেলে প্রাকৃতিক উপায় গুলো চেষ্টা করুন—অনেক সময় এতে ভালো ফল পাওয়া যায়।” —ডাঃ তানভীর আহমেদ, ফিজিক্যাল থেরাপি বিশেষজ্ঞ
উপসংহার
শরীরের যেকোনো ধরনের দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করে। তবে সব সময় ওষুধই একমাত্র সমাধান নয়। ঘরোয়া কিছু প্রাকৃতিক উপায় দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার উপশমে সাহায্য করতে পারে। তবে ব্যথা যদি সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে বা জটিল আকার ধারণ করে, তখন দেরি না করে চিকিৎসকের শরণ নেওয়া বাঞ্ছনীয়।
এম আর এম – ০১৯৪, Signalbd.com