শিক্ষাবিদ আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যু: তাঁর অবদান ও স্মরণীয় মুহূর্তগুলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুতে শিক্ষাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অসুস্থতা ও মৃত্যু
গত ১৩ মার্চ রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার ভাই সাইফুল্লাহ সিদ্দিক ইউএনবিকে জানান, আরেফিন সিদ্দিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকদের মতে, হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোকের কারণে তার মস্তিষ্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে।
শেষ মুহূর্তের ঘটনা
৬ মার্চ দুপুরে ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে রমনার ঢাকা ক্লাবে যান আরেফিন সিদ্দিক। সেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে দ্রুত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অসুস্থতা দ্রুত বাড়তে থাকায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
জীবন ও কর্মজীবন
আরেফিন সিদ্দিক ১৯৫৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। উপাচার্যের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি আবারও নিজ বিভাগে অধ্যাপনায় ফিরে আসেন। ২০২০ সালের জুন মাসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান।
শিক্ষকতার পাশাপাশি, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া, তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি হিসেবেও কাজ করেছেন।
শিক্ষাঙ্গনে অবদান
আরেফিন সিদ্দিকের অবদান শিক্ষাঙ্গনে অমূল্য। তিনি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্বের চেতনা জাগ্রত করতে কাজ করেছেন। তার শিক্ষাদানের পদ্ধতি এবং গবেষণার প্রতি আগ্রহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক, যিনি সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
শোক প্রকাশ
আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবিদ, ছাত্র-ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন। তার অবদান এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতি আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার বিদায়ে শিক্ষাঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যু আমাদের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তিনি ছিলেন একজন মহান শিক্ষক, যিনি তার জীবনকে শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেছেন। তার অবদান এবং আদর্শ আমাদের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবে। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।
এভাবে, আরেফিন সিদ্দিকের জীবন ও কর্ম আমাদের জন্য একটি শিক্ষা, যা আমাদের মানবিকতা এবং শিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দেয়। তার স্মৃতি আমাদের অনুপ্রাণিত করবে এবং আমরা তার আদর্শকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাব।