শিক্ষা

বুয়েটের বঙ্গমাতা হলের নতুন নাম ‘স্বাধীনতা হল’, ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের নামেও পরিবর্তন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলোর নাম পরিবর্তনের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

বুয়েটের বঙ্গমাতা হলের নতুন নাম ‘স্বাধীনতা হল’

বুয়েট প্রশাসন সম্প্রতি ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব’ হলের নাম পরিবর্তন করে ‘স্বাধীনতা হল’ নামকরণ করেছে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত বুয়েট সিন্ডিকেটের ৫৪৯তম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এন এম গোলাম জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে হলের নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে, হলগুলোর নাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি।

‘শহীদ আবরার ফাহাদ লাইব্রেরি’ নামকরণ

একইদিন বুয়েটের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ আবরার ফাহাদ লাইব্রেরি’ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এই নাম নির্ধারণ করে, যা পরবর্তীতে বুয়েট প্রশাসনের অনুমোদন লাভ করে।

ইসিই ভবন থেকে শেখ হাসিনার নাম অপসারণ

শুধু হল নয়, বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) ভবনের নামফলক থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম মুছে ফেলেছেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনাটি শিক্ষার্থী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং প্রশাসনের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দেয়।

ঢাবির ‘বঙ্গবন্ধু হল’ এর নাম পরিবর্তন

শুধু বুয়েট নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হলে নাম পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’-এর নামফলক ভেঙে শিক্ষার্থীরা ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল’ নামে একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেন।

ঢাবির বিভিন্ন হলে শেখ হাসিনার নাম থাকা নামফলকও শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন করেছেন। অমর একুশে হল এবং বিজয় একাত্তর হলের নামফলক থেকে শেখ হাসিনার নাম মুছে দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্তগুলোকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, অন্যরা মনে করছেন এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা জরুরি। আমরা চাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নামকরণ হবে রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে।”

অন্যদিকে, সরকারপন্থী একাংশ মনে করছে, এই পরিবর্তনগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য

বুয়েট ও ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের চাওয়া ও মতামতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুয়েট প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

রাজনৈতিক মহলের প্রতিক্রিয়া

বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকারি দলের নেতারা মনে করছেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। অন্যদিকে, বিরোধীদলীয় নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যবহার করেছেন।

পরবর্তী করণীয়

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন দেখার বিষয়, শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্তগুলোর কার্যকারিতা কতটুকু টিকে থাকে এবং এর কোনো আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন হয় কি না। সরকারিভাবে এই নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হবে কি না, সেটিও আলোচনার বিষয়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button