বিশ্ব

ভারতে ছয় দশক পর অবসরে যাচ্ছে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান

Advertisement

ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষার দীর্ঘদিনের ভরসা মিগ-২১ যুদ্ধবিমান আগামী সেপ্টেম্বরেই শেষবারের মতো উড়বে। রাশিয়ার তৈরি এই বিমানের স্থানে আসবে দেশীয়ভাবে নির্মিত অত্যাধুনিক তেজস এমকে১এ। প্রায় ৬২ বছর পর অবসরের ঘোষণা মিলতেই এটি ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা।

ভারতের ঘোষণায় মিগ-২১ এর যাত্রার সমাপ্তি

ভারতীয় বিমানবাহিনীর ইতিহাসে এক বিশাল অধ্যায়ের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরেই ভারতের আকাশে শেষবারের মতো উড়বে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। ১৯৬৩ সালে এই মডেলের বিমান প্রথম ভারতীয় বায়ুসেনায় যুক্ত হয়। তখন থেকে এটি ছিল ভারতের অন্যতম প্রধান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

বর্তমানে বিমানবাহিনীর হাতে থাকা ৩৬টি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ধাপে ধাপে সরিয়ে ফেলা হবে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ভারত তার সামরিক প্রযুক্তিকে আরও আধুনিক এবং দেশীয়ভাবে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে চায়।

রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১: একটি দীর্ঘ ইতিহাস

১৯৬৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের বিমানবাহিনীতে যোগ দেয় রাশিয়ার তৈরি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান। পরবর্তীতে প্রায় ৯০০টি মিগ-২১ বিমান ভারতীয় বিমানবাহিনীতে সক্রিয় ছিল, যার মধ্যে প্রায় ৬৬০টি ভারতে তৈরি হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ থেকে শুরু করে কারগিল সংঘাত পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে অংশ নিয়েছে এই যুদ্ধবিমান।

এক সময় এটি ছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীর মেরুদণ্ড। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা ও অতিরিক্ত দুর্ঘটনার কারণে এই বিমানকে ধাপে ধাপে অবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

‍দুর্ঘটনার পরিধি এবং বিশ্বাসহীনতা

গত কয়েক বছরে মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের একাধিক দুর্ঘটনা জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে রাজস্থানের হনুমানগড়ে একটি মিগ-২১ বিধ্বস্ত হয়ে তিনজন গ্রামবাসী প্রাণ হারান। বিমানটি উড্ডয়ন করেছিল সুরতগড় ঘাঁটি থেকে এবং পরে ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে ভেঙে পড়ে।

এই ধরনের দুর্ঘটনা শুধু নিরাপত্তা নয়, ভারতীয় বিমানবাহিনীর ভাবমূর্তিতেও প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে ২০২২ সালে ঘোষণা দেওয়া হয়, বাকি থাকা চারটি স্কোয়াড্রন ধাপে ধাপে অবসরে যাবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যেই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।

তেজস এমকে১এ: নতুন যুগের সূচনা

মিগ-২১ এর পরিবর্তে ভারতীয়ভাবে নির্মিত তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। এটি আরও উন্নত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং দেশীয় প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এতে রয়েছে আধুনিক সেন্সর, উন্নত অস্ত্রবাহী ক্ষমতা এবং ইলেকট্রনিক যুদ্ধে সক্ষমতা।

এই বিমান যুক্ত হওয়ায় ভারতের বিমানবাহিনী আরও আত্মনির্ভরশীল ও প্রতিরোধক্ষম হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

‍বিদায়ী স্কোয়াড্রনের প্রতীকী উড্ডয়ন

২০২৩ সালের অক্টোবরে রাজস্থানের বারমের শহরের ওপর দিয়ে প্রতীকীভাবে শেষবারের মতো উড়ে যায় মিগ-২১ এর ৪ নম্বর স্কোয়াড্রনের বিমান। এটি ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার পক্ষ থেকে এই যুদ্ধবিমানের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। এর আগে শ্রীনগরভিত্তিক ৫১ নম্বর স্কোয়াড্রনও অবসর নেয়, যারা কারগিল যুদ্ধে এবং ২০১৯ সালের বালাকোট অভিযানেও অংশ নিয়েছিল।

এই স্কোয়াড্রনের অন্যতম ছিলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান, যিনি পাকিস্তানি একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেন।

‍পরবর্তী পরিকল্পনা ও ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি

ভারত শুধু মিগ-২১ নয়, ২০২৭ সালের মধ্যেই রুশ নির্মিত মিগ-২৯ যুদ্ধবিমানগুলোকেও ধাপে ধাপে অবসরে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে দেশটি আস্তে আস্তে দেশীয় প্রযুক্তিনির্ভর বিমান ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এর পাশাপাশি ভারতের ‘অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট’ (AMCA) প্রকল্পও এগিয়ে চলছে, যার মাধ্যমে পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

সারসংক্ষেপ  

মিগ-২১ এর বিদায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য এক আবেগঘন এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটি যেমন একটি যুগের সমাপ্তি, তেমনই নতুন এক প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের সূচনা। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এই পরিবর্তন কতোটা কার্যকর হবে ভারতের সামরিক কৌশলে? আগামী দিনেই হয়তো মিলবে তার উত্তর।

এম আর এম – ০৪৬১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button