শিক্ষা

ববির প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জুতাপেটা করলেন কর্মচারী

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) এক কর্মচারী, মতিউর রহমান, তার অফিসের সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রানাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকের অফিসে (অর্থ ও হিসাব বিভাগ)।

ঘটনার বর্ণনা

ঘটনার সময়, প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রানাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন অভিযুক্ত কর্মচারী মতিউর। বিষয়টি জানিয়ে ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম রানা ববির রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত অভিযুক্ত কর্মচারীর শাস্তি দাবি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন অবিলম্বে অভিযুক্ত কর্মচারী মতিউরকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করেছেন।

অভিযুক্ত কর্মচারীর দাবি

অভিযুক্ত কর্মচারী মতিউর রহমান জানিয়েছেন, তিনি শহিদুল ইসলাম রানার কাছ থেকে ৩২ লক্ষাধিক টাকা নিয়েছেন। তার দাবি, শহিদুল তাকে ২০ জনের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই টাকা নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি চাকরি বা টাকা কিছুই ফেরত দেননি। এ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে মতিউরের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তার অভিযোগ, এরই মধ্যে শহিদুল তাকে ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, শহিদুলের এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন।

শহিদুল ইসলাম রানার বক্তব্য

ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম রানা জানিয়েছেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে জীবননাশের হুমকি দিয়েছিলেন মতিউর। তার মতে, গত মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটানোর পেছনে সম্ভবত ওই হুমকির কারণ ছিল। শহিদুল বলেন, “মতিউর যে টাকা দাবি করেছে তা সে পাওয়ার কোনো কারণ নেই। চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে শহিদুলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না।” শহিদুল দাবি করেছেন, এটি একটি ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় আমি সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, ও কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন। ববি রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “ঘটনার পর উপাচার্য তাত্ক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত কর্মচারীকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করেছেন। উপাচার্য দাপ্তরিক কাজে ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। তিনি ফিরে এলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

এ ঘটনার পর, উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে এবং এর কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, “বিভাগীয় ও প্রশাসনিক কাজে এমন ঘটনা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। এ ধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় না ঘটে, সে জন্য কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

মতিউরের অভিযোগ

অভিযুক্ত কর্মচারী মতিউর রহমান দাবি করেছেন, তিনি শহিদুল ইসলামের কাছে ৩২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পাওনা আছেন। তার দাবি, শহিদুল তাকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে এই টাকা নিয়েছিলেন, কিন্তু সেই চাকরি বা টাকা কিছুই ফেরত দেননি। মতিউর আরো জানান, সে কারণে তিনি শহিদুলের কাছে টাকা ফেরত চেয়ে অফিসে যান। তবে, অভিযোগ রয়েছে যে, শহিদুল তাকে ধাক্কা দিলে তিনি তার প্রতি সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখান এবং শহিদুলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

কর্মচারীদের সহিংস আচরণের প্রতি নিন্দা

এ ঘটনার পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নিরাপদ রাখতে সহিংস আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা বলেছেন, “এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এর প্রতিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।”

প্রশাসনিক পদক্ষেপ

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং ইতিমধ্যে অভিযুক্ত কর্মচারীকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ব্যক্তি বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এই ধরনের অশোভনীয় আচরণের পুনরাবৃত্তি রোধে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উপসংহার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রানার সঙ্গে কর্মচারী মতিউর রহমানের এই সহিংস ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলার উপর এক ধাক্কা দিয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, শিক্ষক এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তবে এ ধরনের ঘটনায় ভবিষ্যতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় থাকে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button