শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত

Advertisement

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলমান অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ এবং প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি আগের মতোই চলবে।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা সভাপতিত্ব করেন। সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ তাদের দাবিসমূহ সরকারকে অবহিত করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।

শিক্ষকদের তিন দফা দাবি

শিক্ষক নেতাদের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা তিনটি প্রধান দাবি হলো:

  1. সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা
  2. শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতার সমাধান
  3. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা

এই দাবিগুলি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

প্রেক্ষাপট: শিক্ষকদের আন্দোলনের ইতিহাস

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ও পদোন্নতি সংক্রান্ত অভিযোগ নতুন নয়। চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং ১৩তম গ্রেডের শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেন। তবে এতে বৈষম্যের অভিযোগ উঠে। সহকারী শিক্ষকরা মনে করেন, তাদের দাবির যথাযথ সমাধান না হলে কর্মবিরতি এবং অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এর আগে শনিবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বহু শিক্ষক আহত হন এবং তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন। এই ঘটনার পরেও আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান।

বৈঠকের ফলাফল ও স্থগিতের কারণ

রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ কর্মবিরতি আপাতত স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। বৈঠকে শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, “আলোচনার অগ্রগতি এবং সরকারের আশ্বাসের কারণে আমরা আপাতত কর্মবিরতি স্থগিত রাখছি। তবে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

আগামীকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দাবিগুলির বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

প্রভাব ও শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি

কর্মবিরতি স্থগিত হলেও শিক্ষাব্যবস্থার উপর প্রভাব পড়েছে। দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার এবং শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। কর্মবিরতি চলাকালীন সময় শিক্ষাদান কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিল, যার ফলে লাখ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

অন্যদিকে অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকায় শিক্ষকদের আপাতত সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংযোগ অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষকদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করে সরকারের সঙ্গে সংলাপ এবং কর্মবিরতি স্থগিত রাখা একটি সমঝোতার দৃষ্টান্ত। এটি শিক্ষকদের অধিকার সংরক্ষণ এবং শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি কমানোর একটি প্রক্রিয়া।

তবে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকায় পরিস্থিতি অস্থিরতার শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী বৈঠকে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে, তা শিক্ষক ও সরকার উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের আপাতত কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি সরকারের প্রতি শিক্ষকদের আস্থা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আশা তৈরি করেছে। তবে শিক্ষকদের দাবির চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থার স্বাভাবিকতা ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এম আর এম – ২১৬৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button