ইসমুল আজম: আল্লাহর সেই মহান নাম, যার মাধ্যমে প্রার্থনা কখনো ব্যর্থ হয় না
ইসলাম ধর্মে আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর নাম রয়েছে, যেগুলোকে বলা হয় আসমাউল হুসনা। এই নামগুলোর প্রতিটিই মহান, কিন্তু কিছু নাম রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দ্রুত তা কবুল করেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, এমন এক বিশেষ নাম আছে—যাকে বলা হয় ইসমুল আজম (আল্লাহর সর্বোচ্চ, সর্বমহান নাম)। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নামের মাহাত্ম্য ও তা দ্বারা দোয়া কবুলের নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
ইসমুল আজম অর্থ ও মাহাত্ম্য
‘ইসমে আজম’ শব্দটি আরবি। এখানে ইসম অর্থ ‘নাম’, আর আজম অর্থ ‘মহান’ বা ‘শ্রেষ্ঠ’। অর্থাৎ ইসমে আজম মানে আল্লাহর সেই শ্রেষ্ঠ নাম, যার মাধ্যমে দোয়া করলে তা ব্যর্থ হয় না। ইসলামী আলেমদের মতে, এ নামগুলো আল্লাহর একত্ব, করুণা, চিরঞ্জীবতা ও সর্বশক্তিমত্তার প্রতীক।
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ইসমুল আজম দ্বারা দোয়া করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রার্থনা অবশ্যই কবুল করেন। এই নামগুলো শুধু উচ্চারণ নয়, বরং আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস, তাওহিদ ও ভালোবাসার প্রতিফলন।
নবী করিম (সা.)-এর হাদিসে ইসমুল আজমের ইঙ্গিত
হযরত সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে মুসলিম ব্যক্তি দুঃসময়ে এ দোয়া করবে—
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
(অর্থ: ‘আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত’)—
আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করবেন।”
(তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫)
এই দোয়া নবী ইউনুস (আ.)-এর মুখনিঃসৃত, যিনি মাছের পেটের অন্ধকারে এই দোয়া করেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। ইসলামি পণ্ডিতরা বলেন, এ দোয়াতেই রয়েছে ইসমুল আজমের মহিমা।
কুরআনের আয়াতে ইসমুল আজমের উপস্থিতি
ইসমুল আজম সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতের কথা নবী করিম (সা.) উল্লেখ করেছেন।
১. সুরা বাকারা (আয়াত ১৬৩):
وَإِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَاحِدٌ، لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ، الرَّحْمٰنُ الرَّحِيمُ
(অর্থ: ‘তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য, তিনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি পরম দয়ালু, পরম করুণাময়।’)
২. সুরা আলে ইমরান (আয়াত ২):
اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ، الْحَيُّ الْقَيُّومُ
(অর্থ: ‘আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।’)
অনেক হাদিস বিশারদ মনে করেন, এই দুটি আয়াতেই রয়েছে সেই মহান নাম—যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন।
সাহাবিদের দোয়ায় ইসমুল আজমের ব্যবহার
হযরত আনাস ইবনু মালিক (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নামাজে দাঁড়িয়ে দোয়া করলেন:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ، الْحَنَّانُ الْمَنَّানُ، بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ
অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আপনি প্রশংসার যোগ্য, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি দয়ালু, অনুগ্রহশীল, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা। হে মর্যাদা ও মহিমার অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।”
নবী করিম (সা.) এ দোয়া শুনে বললেন, “সে আল্লাহর ইসমুল আজম দ্বারা দোয়া করেছে; যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন, আর কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন।” (তিরমিজি, ৩৭৯২; মুসনাদে আহমাদ, ১২৬২৭)
ইসলামি আলেমদের ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা
ইসলামি গবেষকদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ইসমুল আজম কোনো একক শব্দ নয় বরং এমন কিছু নামের সমষ্টি—যেগুলোর মধ্যে আল্লাহর মহানত্ব ও একত্ব সর্বাধিকভাবে ফুটে ওঠে। “আল-হাইয়্যু আল-কাইয়্যুম”, “আর-রহমান”, “আল-আহাদুস সামাদ” প্রভৃতি নামগুলোকে ইসমুল আজম হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
আলেমরা বলেন, এসব নাম মুখস্থ রেখে নিয়মিত জিকির করা এবং দোয়ার সময় আন্তরিকভাবে উচ্চারণ করা মুমিনের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। এতে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।
দোয়া কবুলের শর্ত ও আদব
ইসমুল আজমের মাধ্যমে দোয়া করার সময় কিছু আদব ও শর্ত মানা জরুরি—
১. একান্ত আন্তরিকতা ও তাওয়াক্কুল থাকতে হবে।
২. পাপ থেকে বিরত থাকা ও হালাল জীবিকা অর্জন করা।
৩. নামাজের পর, রাতের শেষ প্রহরে, রোজার সময় বা দুঃসময়ে দোয়া করলে তা বেশি কবুল হয়।
৪. আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরিফ পড়ে দোয়া শুরু করা উচিত।
মুমিন মুসলমানের উচিত, জীবনের প্রতিটি প্রয়োজনে ইসমুল আজমের নাম স্মরণ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
ইসমুল আজম এমন এক মহান নাম, যা আল্লাহর একত্ব, চিরঞ্জীবতা ও পরম করুণার প্রতিফলন। যে ব্যক্তি এ নামের মাধ্যমে দোয়া করে, সে যেন সরাসরি আল্লাহর দরবারে নিজের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। ইসলাম শিক্ষা দেয়, দোয়া কখনো বৃথা যায় না—তা কবুল হয়, বিলম্বিত হয় বা তার বিনিময়ে অমঙ্গল দূর হয়। তাই মুমিনের করণীয় হলো ধৈর্য, বিশ্বাস ও ভালোবাসা নিয়ে বারবার আল্লাহর কাছে ফিরে আসা।
এম আর এম – ২১৩৪,Signalbd.com



