শিক্ষা

নাসার গ্লোবাল স্পেস চ্যালেঞ্জে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন চুয়েট

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত ‘গ্লোবাল স্পেস চ্যালেঞ্জ ২০২৫’-এ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সিনিয়র হাইস্কুল ও সমমান ক্যাটাগরিতে অংশ নেওয়া ‘টিম এসরো’ মাত্র ৪৯৯.৮ স্কোর অর্জন করে ৫০০ নম্বরের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে। পাশাপাশি তারা ‘বেস্ট টিম ভিডিও’ ক্যাটাগরিতেও প্রথম স্থান অর্জন করে।

প্রতিযোগিতার অবধান

৪ অক্টোবর অনলাইনে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতাটি সাত দিনব্যাপী চলেছে এবং গত শুক্রবার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেস টিমস অ্যাকাডেমি। এ প্রতিযোগিতায় ১৫টির বেশি দেশের ৪০টিরও বেশি দল অংশগ্রহণ করেছে। এলিমেন্টারি, মিডল স্কুল ও সিনিয়র হাইস্কুল—এই তিন বিভাগের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

চুয়েটের অংশগ্রহণকারী দল

চুয়েটের ‘অ্যান্ড্রোমিডা স্পেস অ্যান্ড রোবোটিকস রিসার্চ অর্গানাইজেশন’ ক্লাবের প্রতিনিধি ‘টিম এসরো’ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। দলের সদস্যরা হলেন:

  • সজীব কুমার কর — যন্ত্রকৌশল বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ
  • শুভ আহমেদ — যন্ত্রকৌশল বিভাগ, ৪র্থ বর্ষ
  • আদিল মুবাশশার — কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগ, ৩য় বর্ষ
  • সুদীপ্ত বণিক — তড়িৎ কৌশল বিভাগ, ১ম বর্ষ

দলের সভাপতি সজীব কুমার কর বলেন, “এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। রেজিস্ট্রেশন ফি প্রায় ১,১০০ ডলার, যা জোগাড় করাও সহজ ছিল না। আমাদের শিক্ষক অধ্যাপক সজল চন্দ্র বণিক এবং অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের সহায়তায় এমআইটির মিজানুর চৌধুরী ও তার প্রতিষ্ঠান স্টেমএক্স ৩৬৫ পুরো ফি প্রদান করেন।”

তিনি আরও যোগ করেন, “পূজার ছুটি ও টার্ম ফাইনালের সময় একসাথে কাজ করতে হয়েছে। তবুও দলের একাগ্রতা এবং সঠিক পরিকল্পনার কারণে আমরা এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। ভবিষ্যতেও আমরা দেশের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে চাই।”

প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু

টিম এসরো প্রতিযোগিতায় প্ল্যানেটারি সায়েন্স, স্পেসক্রাফট ডিজাইন, অরবিটাল মেকানিক্স, রিমোট সেন্সিং, এন্ট্রি-ডিসেন্ট-ল্যান্ডিং, মহাকাশে বসবাসযোগ্যতা এবং হিউম্যান ও রোবোটিক এক্সপ্লোরেশনের মতো বিষয়গুলোতে দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। শিক্ষার্থীরা এই বিষয়ে তাদের ধারণা, উদ্ভাবনী সমাধান এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা উপস্থাপন করেছে।

শিক্ষক ও ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজরের মন্তব্য

ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজর অধ্যাপক ড. সজল চন্দ্র বণিক বলেন, “এই অর্জন শুধুমাত্র চুয়েটের নয়, বাংলাদেশের জন্যও গর্বের। শিক্ষার্থীরা সীমিত রিসোর্সে, রাত জেগে এবং অতিশয় প্যাশন নিয়ে কাজ করেছে। তাদের পারফরম্যান্স গতবারের চ্যাম্পিয়নদেরও টেক্কা দিয়েছে, যা সহজ নয়।”

অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমও বলেন, “দলটি যে একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করেছে, তা অন্য শিক্ষার্থীদের জন্যও উদাহরণ হয়ে থাকবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করানো তাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

চুয়েটের এই সাফল্য দেশীয় মহাকাশ গবেষণা ও শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক নতুন মাইলফলক। শিক্ষার্থীদের এই অর্জন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। দেশব্যাপী শিক্ষাবিদ এবং প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা টিম এসরোর সাফল্যকে উদ্দীপক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সাফল্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি ও গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়াবে। পাশাপাশি, STEM (Science, Technology, Engineering, Mathematics) শিক্ষার মান উন্নয়নে এই ধরনের আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণের গুরুত্বও বৃদ্ধি পাবে।

টিম এসরো আগামীতে আরও বড় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতেও দেশের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করবে।

এম আর এম – ১৭২৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button