অর্থনীতি

নতুন চালের দাম বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের উদ্যোগ

Advertisement

সম্প্রতি দেশের বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই বলছেন, ভরা মৌসুমেও চালের দাম ‘অনেক বেশি’ বেড়েছে। তবে এই অভিযোগকে পুরোপুরি সঠিক হিসেবে দেখছেন না খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তার মতে, দাম কিছুটা বাড়লেও সেটি ‘অনেক বেশি’ নয়। পাশাপাশি, যাতে চালের দাম অতিরিক্ত বাড়ে না, সেজন্য সরকারের তরফে সতর্ক নজরদারি চালানো হচ্ছে।

সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সেমিনারের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

চালের দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ ও সরকারের পদক্ষেপ

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানান, দেশের খাদ্য বাজারে চালের দাম কিছুটা বাড়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। কারণ, বিভিন্ন মৌসুমে চাহিদা-সরবরাহের ভারসাম্য কিছুটা ওঠানামা করে। তবে সরকারের লক্ষ্য, চালের মূল্য যেনো ক্রেতাদের জন্য সহনীয় থাকে, সেজন্য বাজারে কঠোর নজরদারি চলছে। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারি মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীলকরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু দেশের অর্থনীতি নয়, নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও অপরিহার্য। তাই দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন আধুনিক প্রযুক্তি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আধুনিক ফুড টেস্টিং ল্যাব নির্মাণে জাপানের সহায়তা

আলী ইমাম মজুমদার জানান, সম্প্রতি জাপানের সহায়তায় একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধুনিক ও নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মাণ করা হবে। এই পরীক্ষাগারের মূল কার্যালয় রাজধানী ঢাকায় থাকবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

তিনি জানান, খুলনা ও চট্টগ্রামেও অত্যাধুনিক ফুড টেস্টিং সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এই আধুনিক ল্যাবগুলো খাদ্যের মান যাচাই ও সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এগুলো বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির (BFSA) জাতীয় রেফারেন্স ল্যাব হিসেবে কাজ করবে, যা দেশের খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।

খাদ্য নিরাপত্তার গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা শুধু খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই নয়, বরং খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা রক্ষা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে খাদ্যাভাস ও খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণে নানা পরিবর্তন আসছে, যা থেকে আমাদের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে।

তিনি আরও জানান, সরকার খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণে কঠোর নিয়মাবলী প্রণয়ন করছে এবং এর বাস্তবায়নে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। খাদ্যের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির কার্যক্রম জোরদার করা হবে। একই সঙ্গে, ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও কাজ চলছে।

চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের উদ্যোগ

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা উদ্যোগ গ্রহণের তথ্য দিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ যেমন চালের মজুদ যথেষ্ট রয়েছে। এতে করে বাজারে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “আমরা চালের দাম যেনো বেশি না বাড়ে, সেজন্য সরকারি সংস্থা ও বাজার পর্যবেক্ষণ কমিটি কাজ করছে।”

চালের পাশাপাশি অন্যান্য প্রধান খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণেও নজরদারি বাড়ানো হবে বলেও জানান তিনি। এর ফলে বাজারে যেনো মজুদ স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো ধরনের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি না ঘটে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাম্প্রতিক চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জনমত ও বিশ্লেষণ

দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো চালের দাম বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠী চালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে খাদ্য সংকটে পড়ার সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তিত। তাদের জন্য সাশ্রয়ী ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে মৌসুমী কারণে কিছুটা চাপ থাকলেও, বাজারে সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অনিয়মও বড় ভূমিকা রাখে। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহ চেইনকে স্বচ্ছ ও কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

খাদ্য নিরাপত্তায় প্রযুক্তির ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ

খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্বও আলোকপাত করেন খাদ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আধুনিক পরীক্ষাগার ও ফুড টেস্টিং সিস্টেম আমাদের খাদ্যের মান রক্ষা করতে সাহায্য করবে। এটি শুধু বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই নয়, ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে।”

এছাড়া, জাপানের সহযোগিতায় নির্মিত আধুনিক ল্যাবগুলো দেশের খাদ্য মান নিরীক্ষায় আন্তর্জাতিক মানের পৌঁছাতে সক্ষম হবে। এটি কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্যও লাভজনক প্রমাণিত হবে।

খাদ্য নিরাপত্তায় সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ অপরিহার্য

চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সাম্প্রতিক অভিযোগ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সচেতন এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশ আরও সুরক্ষিত খাদ্য ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ভোক্তা ও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা ও সচেতনতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে দেশের খাদ্য বাজার স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকে। সরকার, কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button