
দেশের বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধি করেছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ ভাতা এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হয়। সিদ্ধান্তটি কার্যকর হওয়ায় শিক্ষক মহলে স্বস্তি তৈরি হয়েছে, যদিও তারা মনে করছেন বর্তমান বাজার পরিস্থিতির তুলনায় এ ভাতা এখনো যথেষ্ট নয়।
ঘোষণার বিস্তারিত
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা পূর্বের ১,০০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকায় উন্নীত করা হলো। এটি কার্যকর হবে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির তারিখ থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি শাখার উপসচিব মোসা. শরীফুন্নেসা স্বাক্ষরিত পরিপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিপত্রে শর্ত সাপেক্ষে বলা হয়, এ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। ভবিষ্যতে এ ভাতা প্রদানে কোনো অনিয়ম দেখা দিলে এর দায়ভার সংশ্লিষ্ট বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা দীর্ঘদিন ধরে অপরিবর্তিত ছিল। বর্তমানে দেশে বাড়িভাড়া ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক সংগঠনগুলো সরকারের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে এ ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এর পর থেকে বাজারদরের সঙ্গে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, ফলে ভাতা পুনর্বিবেচনার দাবি ওঠে।
অবশেষে দীর্ঘ আলোচনার পর অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য পরিপত্র জারি করে।
শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া
সরকারি এই সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমাজের মধ্যে স্বস্তি তৈরি হলেও অনেকেই এটিকে পর্যাপ্ত মনে করছেন না। শিক্ষক নেতাদের মতে, বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বাড়িভাড়া গড়ে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। সে তুলনায় ৫০০ টাকা বৃদ্ধি খুব সামান্য।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, “আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে বর্তমান ভাড়া ও দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অন্তত ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা নির্ধারণ করলে তা শিক্ষকদের প্রকৃত সহায়তা হতো।”
সরকারের ব্যাখ্যা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাতা বাড়ানো হলেও সরকারের আর্থিক সামর্থ্যের দিকটি বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। ধাপে ধাপে এ ভাতা বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা বুঝি শিক্ষকদের সমস্যার কথা। তবে একসঙ্গে বড় অঙ্কে ভাতা বৃদ্ধি সরকারের জন্য আর্থিকভাবে চাপ তৈরি করতে পারে। তাই প্রথম ধাপে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।”
শিক্ষাখাতে প্রভাব
শিক্ষক সমাজে আংশিক স্বস্তি এলেও এ সিদ্ধান্ত পুরো শিক্ষাখাতের জন্য ইতিবাচক একটি বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিনের দাবির আংশিক পূরণ হওয়ায় সরকারের প্রতি আস্থা কিছুটা বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হলে শিক্ষার মানোন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংখ্যাগত চিত্র
বর্তমানে দেশে প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। প্রত্যেকের জন্য মাসে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে দিলে সরকারের বার্ষিক অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক দিক থেকে এটি সরকারের জন্য একটি বড় ব্যয় হলেও শিক্ষা খাতকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষাবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “শিক্ষকরা যদি আর্থিক অনিশ্চয়তায় থাকেন, তবে তাঁরা শিক্ষাদানে মনোযোগী হতে পারবেন না। সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিবাচক, তবে দীর্ঘমেয়াদে আরও বাড়ানোর প্রয়োজন আছে।”
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় উন্নীত হওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে শিক্ষক সমাজ মনে করছে, এ ভাতা এখনো যথেষ্ট নয় এবং সময়োপযোগী করতে হলে আরও বৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকার ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করবে কি না, সেটাই এখন শিক্ষকদের বড় প্রত্যাশা।
এম আর এম – ১৬২৫,Signalbd.com