
মালয়েশিয়ায় প্রবেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পর্যাপ্ত অর্থ ও আবাসনের ব্যবস্থা না থাকায় কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২০৩ জন বাংলাদেশিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত দুই দিনে পৃথক অভিযানে মোট ২৯৭ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়।
মালয়েশিয়ার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থার তথ্য
মালয়েশিয়ান বর্ডার কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রোটেকশন এজেন্সির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই দিনে পরিচালিত এই অভিযানে মোট ২৯৭ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ এবং টার্মিনাল-২ থেকে ১৯৮ জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে ১২৩ জন বাংলাদেশি, ৬ জন পাকিস্তানি, ৫৩ জন ইন্দোনেশিয়ান, ১৩ জন ভারতীয়, ২ জন ভিয়েতনামী এবং ১ জন সিরিয়ান নাগরিক ছিলেন।
এছাড়া শুক্রবার আরও ৯৯ জনকে আটক করা হয়, যার মধ্যে ৮০ জন বাংলাদেশি, ১০ জন ভারতীয় এবং ৯ জন পাকিস্তানি ছিলেন। আটককৃত সবাইকে প্রাথমিকভাবে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
ফেরত পাঠানোর কারণ
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজনীয় নথি, ভিসার শর্ত পূরণ, পর্যাপ্ত অর্থের প্রমাণ এবং বৈধ আবাসনের বুকিং থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আটক হওয়া যাত্রীদের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে গুরুতর অনিয়ম ও সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া যায়।
মূল কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- পর্যাপ্ত অর্থ বা ব্যয়ের সক্ষমতার প্রমাণ না থাকা
- হোটেল বা আবাসনের সঠিক বুকিং না থাকা
- ভ্রমণের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট বা সন্দেহজনক হওয়া
- কিছু যাত্রীর মোবাইল ফোনে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার মতো ছবি ও তথ্য পাওয়া
অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান
মালয়েশিয়ার সীমান্ত সুরক্ষা ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, দেশটির সীমানা অবৈধভাবে ব্যবহার করা যাবে না। যে কেউ জাল নথি ব্যবহার করে বা সন্দেহজনক উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মহাপরিচালক দাতুক সেরি মোহাম্মদ শুহেইলি মোহাম্মদ জাইন বলেন, “আমরা সীমান্ত নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিই। মানবপাচার বা বেআইনি প্রবেশ ঠেকাতে এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”
পূর্বেও এমন ঘটনা ঘটেছে
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মানুষ কর্মসংস্থানের আশায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি এবং শর্ত পূরণ না করলে বিমানবন্দরেই তাদের ফেরত পাঠানো হয়। গত কয়েক মাসে একাধিকবার একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, যা নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কবার্তা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা বৈধ প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় যেতে চান, তাদের উচিত ভ্রমণের আগে সমস্ত কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত করা। শুধুমাত্র টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছানো যথেষ্ট নয়। নথি, অর্থের প্রমাণ এবং আবাসনের বুকিং নিশ্চিত না হলে ফেরত আসতে হবে, যা আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও মানসিক কষ্টের কারণ হয়।
ভবিষ্যতে কী হতে পারে
এ ধরনের ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে মালয়েশিয়ার অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠোর হতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যাচাই-বাছাই করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানবপাচার রোধে এই কঠোরতা একদিকে যেমন প্রয়োজনীয়, অন্যদিকে বৈধভাবে চাকরির উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন এমন যাত্রীদেরও আরও সচেতন হতে হবে।
সারসংক্ষেপ
মালয়েশিয়ার এই সিদ্ধান্ত আবারও মনে করিয়ে দিল যে বিদেশে যেতে হলে আইন মেনে, প্রয়োজনীয় নথি ও প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা করা জরুরি। অন্যথায় স্বপ্নের দেশে পা রাখার আগেই বিমানবন্দর থেকে ফিরতে হবে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার ২৯৭ জন বিদেশি নাগরিককে আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে দেশটির সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা। এর মধ্যে ২০৩ জনই বাংলাদেশি। সন্দেহজনক উদ্দেশ্যে ভ্রমণ, যথাযথ নথি না থাকা এবং পর্যাপ্ত অর্থের অভাবসহ একাধিক কারণে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এম আর এম – ০৫২১, Signalbd.com