বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় উৎসব অমর একুশে বইমেলা এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হতে যাচ্ছে। বাংলা একাডেমি জানায়, আগামী ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে শুরু হবে এবারের বইমেলা, যা চলবে ১৭ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত হলেও, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রমজানের কারণে এবারের সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়েছে।
তারিখ ঘোষণার বিস্তারিত
বাংলা একাডেমির আয়োজনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালক এবং প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিরা।
সভা শেষে একাডেমি থেকে জানানো হয়, নির্বাচন ও রমজানের কারণে ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন সম্ভব নয়। তাই ভিন্ন সময়ে হলেও বইমেলা তার গৌরব ও ঐতিহ্য নিয়ে আয়োজন করা হবে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
অমর একুশে বইমেলা মূলত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে ধারণ করে শুরু হয়েছিল। ১৯৭২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে বইমেলার সূচনা হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে মাসব্যাপী এই মেলা আয়োজন করা হয়।
তবে ইতিহাসে এটি দ্বিতীয়বার যখন বইমেলা ফেব্রুয়ারির বাইরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ২০২১ সালে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছিল।
নির্বাচন ও রমজানের প্রভাব
২০২৬ সালের শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রমজান মাস পড়ায় ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। প্রকাশক ও কর্তৃপক্ষের আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, ডিসেম্বর-জানুয়ারি সময়কালেই মেলা আয়োজন সবচেয়ে উপযুক্ত হবে।
বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, এভাবে আয়োজন করলে নির্বাচনকালীন জটিলতা বা রমজান মাসের সীমাবদ্ধতা কোনোটিই মেলায় প্রভাব ফেলবে না।
প্রকাশক ও পাঠকদের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি জানিয়েছে, সময় পরিবর্তন হলেও বইমেলায় কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। প্রকাশকরা বরং এটিকে নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছেন। ডিসেম্বর মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকে, ফলে তরুণ পাঠকদের অংশগ্রহণ আরও বাড়তে পারে বলে আশা করছেন তারা।
অন্যদিকে পাঠকরাও আগাম আয়োজনকে স্বাগত জানাচ্ছেন। অনেকের মতে, শীতের আবহাওয়া মেলা ঘুরে দেখার জন্যও সুবিধাজনক হবে।
সম্ভাব্য আয়োজন ও পরিকল্পনা
বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলা প্রাঙ্গণে এবারও থাকবে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা, নাটক ও সংগীতানুষ্ঠান। ডিজিটাল বুক স্টল ও অনলাইন বই ক্রয়ের সুবিধাও বাড়ানো হবে।
প্রকাশকরা ইতোমধ্যে বই প্রকাশ ও প্রকাশনা উৎসবের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবারও প্রায় তিন হাজার নতুন বই প্রকাশিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাহিত্য বিশ্লেষকরা বলছেন, সময় পরিবর্তন হলেও বইমেলার মূল চেতনাকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। বরং নতুন সময়ে আয়োজনের মাধ্যমে মেলা আরও বৈচিত্র্যময় হতে পারে।
একজন প্রকাশনা বিশেষজ্ঞ বলেন, “বইমেলা শুধু বই বিক্রির আয়োজন নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব। তাই সময় পরিবর্তন কোনো সমস্যা নয়, বরং এটি নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।”
পরিশেষে
অমর একুশে বইমেলা শুধু প্রকাশক বা পাঠকদের জন্য নয়, বরং সমগ্র জাতির জন্য একটি সাংস্কৃতিক সম্পদ। নির্বাচনী বাস্তবতা ও রমজানের কারণে সময় পরিবর্তন হলেও আয়োজনের মাহাত্ম্য অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলা এই মেলা নতুন উচ্ছ্বাসে ভরে উঠবে বলেই প্রত্যাশা।
এম আর এম – ১৪০৩,Signalbd.com
				
					


