শিক্ষা

চাকসুতে শিবিরের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা, আছেন হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রার্থীও

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে নতুন পাল্লায় নামার ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবির। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাইদুল ইসলাম এই ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিবির ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। এই প্যানেলে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন বিভাগ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক পটভূমির প্রতিফলন। বিশেষভাবে নজর কেড়েছে প্যানেলে হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রার্থীর অন্তর্ভুক্তি।

পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও প্রার্থীর তথ্য

ছাত্রশিবিরের ঘোষিত প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহের নাম ও বিভাগসমূহ নিম্নরূপ:

  • সহসভাপতি (ভিপি): ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম হোসেন রনি
  • সাধারণ সম্পাদক (জিএস): ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব
  • সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস): সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ ও দায়িত্ব

  • খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক: মোহাম্মদ শাওন
  • সহ-খেলাধুলা সম্পাদক: শাহপরান মারুফ
  • সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: হারেজুল ইসলাম
  • সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক: জিহাদ হোসেন
  • দফতর সম্পাদক: আব্দুল্লাহ আল নোমান
  • সহ-দফতর সম্পাদক: জান্নাতুল আদন নুসরাত
  • সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক: তাহসিনা রহমান
  • গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক: তানভীর আঞ্জুম শোভন
  • বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক: মাহবুব রহমান
  • ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক: নাহিমা আক্তার দ্বীপা
  • সহ-ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক: জান্নাতুল ফেরদাউস রিতা
  • স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক: আফনান হাসান ইমরান
  • মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক: মোনায়েম শরীফ
  • ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক: মেহেদী হাসান সোহান
  • যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক: ইসহাক ভূঁইয়া
  • সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক: ওয়ায়দুল সালমান
  • আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক: তাওহীদ রাব্বি
  • পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক: মাসুম বিল্লাহ

প্যানেলের অন্যান্য ছয় নির্বাহী সদস্য হিসেবে আছেন: জান্নাতুল ফেরদাউস সানজিদা, সালমান ফারসি, আকাশ দাশ, সোহানুর রহমান এবং আদনান শরীফ।

শিবিরের লক্ষ্য ও প্রার্থীদের বৈচিত্র্য

সংবাদ সম্মেলনে সাইদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু নির্বাচনে অংশ নেওয়া নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয়, শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা। এই প্যানেলে বিভিন্ন ধর্ম, সমাজ ও শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে সকলের জন্য একটি সমন্বিত শিক্ষার্থী নেতৃত্ব তৈরি হয়।”

তিনি আরও বলেন, “হিন্দুধর্মাবলম্বী প্রার্থীর অন্তর্ভুক্তি আমাদের প্যানেলের বৈচিত্র্য এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধির প্রতিফলন। আমরা চাই যে শিক্ষার্থীরা নিজের পরিচয়, ধর্ম, ও সংস্কৃতি নিয়ে গর্বিত থাকুক এবং সকলে মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করুক।”

চাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (চাকসু) নির্বাচন প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এটি শুধুমাত্র একটি নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, সমাজসেবা এবং মানবাধিকার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গড়ার একটি প্ল্যাটফর্ম

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে চাকসু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্যানেলগুলো শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গবেষণা, স্বাস্থ্য, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, পরিবেশ সচেতনতা এবং ছাত্রী কল্যাণের মতো বিষয় নিয়ে কাজ করে।

শিবিরের অতীতের সাফল্য

ছাত্রশিবিরের ইতিহাস বহু নির্বাচনে দৃঢ় এবং সফল ভূমিকা দেখিয়েছে। তারা বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রকল্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজে শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করেছে। অতীতে, তাদের নেতৃত্বাধীন প্যানেলগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জীবনকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি ছাত্রসমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা ও সম্প্রদায়িক মূল্যবোধ বৃদ্ধিতেও অবদান রেখেছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

ছাত্রসমাজের বিভিন্ন অংশ এই ঘোষণা নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অনেক শিক্ষার্থী বলেছে, “প্যানেলে ধর্ম, লিঙ্গ ও শিক্ষাবর্ষের বৈচিত্র্য রয়েছে, যা ছাত্র নেতৃত্বের জন্য একটি ভালো উদাহরণ।” অন্যরা উল্লেখ করেছেন যে, “সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত পরিবেশকে আরও উন্নত করবে।”

প্রার্থীদের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের আগে প্যানেল প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ এবং ওয়ার্কশপের মাধ্যমে তাদের মতামত সংগ্রহ করবেন। এছাড়াও তারা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে নতুন গবেষণা উদ্যোগ, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং সমাজসেবা কার্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা করছেন।

ছাত্রশিবিরের এক সূত্র জানিয়েছে, “আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমানভাবে সুযোগ পায়। আমাদের প্রার্থীরা শিক্ষার্থী জীবনের সব দিক নিয়ে কাজ করবেন—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং মানবাধিকার।”

সমন্বয় ও একতা

শিবিরের এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমাজে সামাজিক সম্প্রীতি এবং ঐক্যের বার্তা পাঠাচ্ছে। প্যানেলের বৈচিত্র্য এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াবে এবং নেতৃত্ব গঠনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকসু নির্বাচনের এই নতুন প্যানেল ঘোষণা শিক্ষার্থী সমাজে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলটি বৈচিত্র্য, নেতৃত্ব, এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগামী নির্বাচনে প্যানেলের কার্যক্রম এবং প্রার্থীদের কর্মক্ষমতা মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করবেন।

এই প্যানেল শুধু নির্বাচনের জন্য নয়, বরং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমাজের উন্নয়ন, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, মানবাধিকার এবং গবেষণায় নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।

MAH – 12896 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button