বাংলাদেশ

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে ১৩ ডাকাত গ্রেপ্তার, উদ্ধার হলো পিকআপ

Advertisement

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ককে ঘিরে দুঃসাহসী ডাকাতির ঘটনায় অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে এক সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের ১৩ জন সদস্য। পুলিশের টানা অভিযান, গোয়েন্দা তৎপরতা এবং একাধিক জেলার যৌথ সমন্বয়ের ফলেই এই সাফল্য আসে। শুধু ডাকাত গ্রেপ্তারই নয়, ডাকাতির শিকার হওয়া ফলবোঝাই পিকআপটিও উদ্ধার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানায় বুধবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

ঘটনার পটভূমি

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত। খুলনার তেরখাদা থেকে তরমুজ বোঝাই একটি পিকআপ যাচ্ছিল মাদারীপুরের মস্তফাপুর ফলের আড়তে। গাড়িটি যখন রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম ব্রিজ এলাকায় পৌঁছায়, তখন মহাসড়কের ওপরেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ডাকাত দল। তারা চালক ও হেলপারকে মারধর করে গাড়ি ছিনিয়ে নেয়।

পিকআপটির মালিক, খুলনার রূপসা উপজেলার শিরগাতি গ্রামের বাসিন্দা সরদার জাহাঙ্গীর আলম (৬২)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় ফলের ব্যবসা করছেন। ডাকাতির পর তিনি ভেঙে পড়েন, তবে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর পুলিশ দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেয় গাড়ি উদ্ধারের।

পুলিশি অভিযান ও গ্রেপ্তারকৃতরা

ডাকাতি মামলার পরদিনই রাজৈর থানা পুলিশ প্রথম অভিযান চালায়। এতে ডাকাত দলের দুই সদস্য ধরা পড়ে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।

তাদের দেওয়া সূত্র ধরে পুলিশ ফরিদপুর, কেরানীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। কয়েকদিনের মধ্যেই আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে নতুন করে পাঁচজনসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন:

  • শাহ আলম শেখ (৪০), ভাঙ্গা, ফরিদপুর
  • কবির চোকদার (৪৫), ভাঙ্গা, ফরিদপুর
  • জাকির খাঁ (৫০), সদরপুর, ফরিদপুর
  • ইকরাম আলী মুন্সী (৩৫), ভাঙ্গা, ফরিদপুর
  • হৃদয় বয়াতি (২৩), পাতরাইল, ফরিদপুর
  • সুমন হোসেন মাতুব্বর (২৬), নগরকান্দা
  • আল আমিন (৪৫), কেরানীগঞ্জ, ঢাকা
  • হাবিব (২৫), কেরানীগঞ্জ
  • ইকবাল হোসেন (৩৬), নগরকান্দা
  • সুজন মাতুব্বর (২৭), রাজৈর, মাদারীপুর
  • সোহাগ ওরফে নোবেল (২৬), করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ
  • ডালিম সরকার (৩০), করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ
  • স্বপন (২৫), করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ

উদ্ধার অভিযান ও পিকআপের সন্ধান

গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে জানা যায়, ডাকাতরা ডাকাতি করা তরমুজ ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাজারে বিক্রি করে ফেলে। আর গাড়িটি লুকিয়ে রাখা হয় গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকায়। পুলিশের তৎপরতায় সেখান থেকে পিকআপটি উদ্ধার হয়।

পিকআপ মালিক জাহাঙ্গীর আলম আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় বলেন,

“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল গাড়িটি হারানো। কিন্তু রাজৈর থানার পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে এটি ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। ডাকাতদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়—এটাই আমার দাবি।”

পুলিশের বক্তব্য

সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) সালাহ উদ্দিন কাদের সাংবাদিকদের জানান,

“আমরা ধাপে ধাপে তদন্ত চালিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। তাদের দেওয়া তথ্যেই গাড়ি উদ্ধারে সক্ষম হয়েছি। এরা পেশাদার ডাকাত, দীর্ঘদিন ধরেই মহাসড়কে সক্রিয় ছিল।”

তিনি আরও বলেন,

“ডাকাতরা মহাসড়ককে নিরাপদ ভাবমূর্তি থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিল। তবে এই অভিযানের পর জনগণ নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন।”

মহাসড়কে ডাকাতির পুরোনো ইতিহাস

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে এ পথে। কিন্তু নানা সময় এ মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,

  • অন্ধকারে আলোর অভাব,
  • নির্দিষ্ট এলাকায় টহলের ঘাটতি,
  • দীর্ঘ মহাসড়কে স্থানীয় অপরাধচক্রের সক্রিয়তা,

এসব কারণে ডাকাতি বেড়ে যায়।

জনমতের প্রতিক্রিয়া

ডাকাত গ্রেপ্তারের খবরে সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলও পুলিশের এই সাফল্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।

একজন ট্রাকচালক বলেন,

“মহাসড়কে রাতে গাড়ি চালাতে ভয় পেতাম। এখন আশা করছি নিরাপত্তা বাড়বে।”

একজন ফল ব্যবসায়ী মন্তব্য করেন,

“এ ধরনের ঘটনা আমাদের ব্যবসায় ক্ষতির কারণ। তবে ডাকাতরা ধরা পড়ায় আমরা আশ্বস্ত।”

নিরাপত্তা বিশ্লেষণ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বড় মহাসড়কগুলোতে নিয়মিত টহল, সিসিটিভি নজরদারি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় জোরদার করতে হবে। এতে শুধু ডাকাতি নয়, সড়ক দুর্ঘটনাও কমানো সম্ভব।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অপরাধীদের পুনর্বাসন ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করাও জরুরি। নচেৎ গ্রেপ্তার হলেও অনেক সময় তারা পুনরায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনা পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে সফলভাবে সমাধান হয়েছে। তবে এটি একক ঘটনা নয়। মহাসড়কের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে যে শঙ্কা রয়েছে, সেটি দীর্ঘমেয়াদে সমাধান করতে হবে।

গ্রেপ্তার হওয়া ১৩ ডাকাত আইনের মুখোমুখি হবে, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি দূর না হলে আবারও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

MAH – 13111 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button