ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে চলমান আইনি জটিলতার অবসান হয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ স্থগিত করেছেন। ফলে ডাকসু নির্বাচনে আর কোনো বাধা থাকছে না।
বিকেল ৪টার দিকে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন। আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে ডাকসু নির্বাচন আগের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির গণমাধ্যমকে জানান, হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন করেছিল। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন। এতে নির্বাচন আয়োজনের আর কোনো আইনি বাধা নেই।
হাইকোর্টের পূর্বের আদেশ কী ছিল?
এর আগে আজ দুপুরে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দিয়েছিল। বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ-এর প্রার্থিতা বৈধ কি না, তা নিয়ে আনা অভিযোগগুলো যাচাই করার আগে নির্বাচন হওয়া উচিত নয়। এজন্য হাইকোর্ট নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় এবং অভিযোগগুলো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডাকসুর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে জমা দিতে বলে।
বিতর্কের সূচনা কোথা থেকে?
গতকাল ডাকসু নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদ-এর প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বামজোট সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ফাহমিদা আলম অভিযোগ করেন যে, ফরহাদের প্রার্থিতা অবৈধ এবং নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। রিটের ভিত্তিতে হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে। তবে, চেম্বার আদালতের আজকের সিদ্ধান্তের ফলে সেই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকছে না।
ডাকসু নির্বাচন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ ছাত্র সংগঠন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী রাজনৈতিক আন্দোলনে ডাকসুর ভূমিকা ছিল অনন্য।
দীর্ঘ ২৮ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ডাকসু নির্বাচন। এবার ২০২৫ সালের এই নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কারণ, ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও তারিখ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন জানিয়েছে, পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী নির্বাচনী কার্যক্রম চলবে। নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ ও প্রার্থী তালিকা আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। ভোট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও একাডেমিক ভবনে কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
আইনি জটিলতার প্রভাব কতটা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত করার ফলে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেছে। তবে, এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা সংক্রান্ত অভিযোগ এখনও ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। তাই ভবিষ্যতে এ বিষয়ে নতুন কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একাংশ বলছে, আদালতের এই রায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাঁচিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করছেন, প্রার্থিতা নিয়ে অভিযোগের সঠিক তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত ভোট হওয়া উচিত নয়।
ডাকসু নির্বাচনে যেসব পদে ভোট হবে
ডাকসুতে মোট ২৫টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সভাপতি (ভিপি), সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদ রয়েছে।
ভবিষ্যতের রাজনীতিতে ডাকসুর প্রভাব
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডাকসুর নির্বাচিত নেতারা পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের গণআন্দোলন—সবখানেই ডাকসুর নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তাই ২০২৫ সালের নির্বাচনও ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চেম্বার আদালতের সিদ্ধান্তে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোনো বাধা নেই। আগামী দিনে কী হয়, শিক্ষার্থীরা তা আগ্রহ নিয়ে দেখছে। প্রার্থিতা বিতর্কের সমাধান কীভাবে হয়, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপাতত পরিষ্কার যে, ডাকসু নির্বাচন দেশের ছাত্ররাজনীতির এক বড় উৎসব হতে চলেছে।
MAH – 12589, Signalbd.com



