শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব-পর্দা নিয়ে অস্থিরতার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন: আহমাদুল্লাহ
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব ও পর্দা সংক্রান্ত অস্থিরতার স্থায়ী সমাধান চেয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
আহমাদুল্লাহ বলেন, ধর্ম পালন করা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু ড্রেসকোডের অজুহাতে এই অধিকার খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা সংবিধানবিরোধী। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক ও প্রতীক ব্যবহারে একটি সুস্পষ্ট, সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা থাকা জরুরি, যাতে বারবার বিতর্ক তৈরি না হয়।
ধর্মীয় অধিকার ও শিক্ষা
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শিখ সম্প্রদায়ের পাগড়ি তাদের ধর্মীয় প্রতীক। তারা বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা পরেই পড়াশোনা করে, এমনকি সামরিক ও সরকারি চাকরিতেও অংশগ্রহণ করে। তাহলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হিজাব বা নিকাব পরা মেয়েরা কেন তাদের শিক্ষার অধিকার পুরোপুরি ভোগ করতে পারবে না।
তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অপ্রয়োজনীয় অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি
গত কয়েক সপ্তাহে দেশের কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরিধান সংক্রান্ত বিতর্ক এবং অস্থিরতার ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ এবং শিক্ষকমণ্ডলী মাঝে মাঝে হিজাব নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন, যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ধর্মীয় পোশাক নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত বিরোধ এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশে ব্যাঘাত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হিজাব ও ধর্মীয় পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতিমালা মেনে চলতে হবে। এই নীতিমালা অবশ্যই সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা যাতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করতে পারে এবং একইসাথে শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা না সৃষ্টি হয়, তার জন্য নীতিমালা সর্বজনস্বীকৃত হতে হবে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও তুলনা
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্মীয় প্রতীক সংক্রান্ত নীতি আছে। উদাহরণস্বরূপ, শিখদের পাগড়ি এবং ইহুদী সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পোশাক আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমর্থন পায়। শিক্ষার্থীরা সেখানে তাদের ধর্মীয় পরিচয় ধরে রেখে পড়াশোনা করতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব বা নিকাব পরিধানের ক্ষেত্রে সঠিক নীতিমালা তৈরি করলে, দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীরাও তাদের শিক্ষার অধিকার ভোগ করতে সক্ষম হবে।
প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, হিজাব সংক্রান্ত অস্থিরতার স্থায়ী সমাধান না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশে উত্তেজনা চলতেই থাকবে। নীতিমালা নির্ধারণের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং প্রশাসনকে একটি সমন্বিত নির্দেশিকা প্রদান করা যাবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক ও সংঘাত কমানো সম্ভব হবে।
শেষ কথা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব-পর্দা সংক্রান্ত অস্থিরতা দূর করতে একটি সুস্পষ্ট ও সর্বজনস্বীকৃত নীতিমালা থাকা অত্যন্ত জরুরি। শায়খ আহমাদুল্লাহর আহ্বান অনুসারে, রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর ধর্মীয় অধিকার ও শিক্ষার অধিকার সুরক্ষিত রাখার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।
এম আর এম – ১১২২, Signalbd.com



