রাজধানী ঢাকার শাহবাগে গত দুই দিন ধরে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা। তাদের এই আন্দোলনটি ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা তিনটি মূল দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন, যা তাদের পেশাগত অধিকার ও মর্যাদার সাথে সম্পর্কিত। এই প্রতিবেদনটি তাদের দাবিগুলো, আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবে।
আন্দোলনের পটভূমি
প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তবে, তাদের দাবি পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা এবার সরাসরি সড়কে নেমে এসেছেন। ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা তাদের দাবি সরকার ও জনগণের কাছে তুলে ধরতে চান।
প্রধান দাবিসমূহ
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের প্রধান তিনটি দাবি নিম্নরূপ:
- ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ পদবী ব্যবহার: ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য এই দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা মনে করেন, তাদের শিক্ষা ও দক্ষতা স্নাতক প্রকৌশলীদের সমান, তাই তাদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ পদবী ব্যবহার করা উচিত।
- ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নবম গ্রেডে পদোন্নতি: বর্তমানে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নবম গ্রেডে পদোন্নতি না দেওয়ার কারণে তারা পেশাগত উন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই পদোন্নতির মাধ্যমে তাদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
- দশম গ্রেডের চাকরিতে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ: বর্তমানে, দশম গ্রেডের চাকরিতে শুধুমাত্র স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের পেশাগত উন্নতির পথে একটি বড় বাধা।
আন্দোলনের বর্তমান পরিস্থিতি
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না। তাদের এই অবস্থানের কারণে শাহবাগ ও আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাতায়াতকারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ বিকল্প রাস্তা চালু করলেও যানজট কমানো সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি জানিয়ে আসছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সড়কে নেমেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এই আন্দোলন নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবেন।
আন্দোলনের প্রভাব
এই আন্দোলনের ফলে রাজধানীর যানজট পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, তারা যানজটের কথা জানেন, তবে তাদের দাবি পূরণের জন্য এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন। তারা আশা করছেন, তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার তাদের দাবি মেনে নেবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আগামী দিনে তারা আরও বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাদের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়া হোক।
প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন তাদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাদের দাবি পূরণ হলে, শুধু তাদেরই নয়, দেশের প্রকৌশল খাতের উন্নয়ন হবে। তাই সরকারের উচিত, শিক্ষার্থীদের দাবি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
MAH – 12507 , Signalbd.com



