শিক্ষা

বুয়েট শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করলো ‘লংমার্চ টু ঢাকা’

Advertisement

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবিতে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টায় শাহবাগ এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি ওয়ালী উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, আন্দোলন এখনও নন-ভায়োলেন্ট উপায়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা দেশের কল্যাণে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন চালাবেন।

কর্মসূচির প্রেক্ষাপট

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে আন্দোলন চালান। তবে সরকারি আশ্বাস না পেয়ে তারা দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে লংমার্চের ঘোষণা দেন।

ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ কর্মসূচিতে সারা দেশের প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। এটি কোনো ব্যক্তির বা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নয়, বরং প্রকৌশল খাতের সংস্কারের জন্য আমাদের আন্দোলন।’

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি

শিক্ষার্থীরা এই লংমার্চের মাধ্যমে প্রধানত তিনটি দাবির বাস্তবায়ন চাচ্ছেন:

১. ৯ম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিদ্যমান ৩৩ শতাংশ কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা।
২. ১০ম গ্রেডে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য থাকা ১০০ শতাংশ কোটা বাতিল করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা।
৩. বিএসসি ডিগ্রি ছাড়া ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার না করা এবং করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এই দাবিগুলো শিক্ষার্থীরা মনে করেন, দেশের প্রকৌশল খাতের মান ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশেষ অভিযোগ ও নিরাপত্তা চাওয়া

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন যে, বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হলে আন্দোলন আরও ফলপ্রসূ হবে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন যে, আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও সংগঠিতভাবে পরিচালিত হবে।

আন্দোলনের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

এই লংমার্চ ঘোষণার পর শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের একতার মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা উল্লেখযোগ্য। এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষমতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের এই পদক্ষেপ প্রশাসন ও শিক্ষানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। শিক্ষার্থীরা যদি শান্তিপূর্ণ ও কাঠামোগতভাবে আন্দোলন চালায়, তবে সরকারের কাছে তাদের দাবির গুরুত্ব বাড়বে।

বুয়েট শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নতুন নয়। এর আগে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ে রাস্তা অবরোধ, মানববন্ধন ও আন্দোলন করেছেন। তবে এবার লংমার্চের মাধ্যমে তারা আরও বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়ে রাজধানীতে আসছেন।

পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলো সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বা সীমিত এলাকায় পরিচালিত হতো, কিন্তু এবার জাতীয় পর্যায়ে সারা দেশের প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, লংমার্চের পর তারা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান চাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব, সমন্বয় এবং নৈতিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটাবে। এছাড়া, প্রকৌশল খাতের সংস্কার ও নীতিমালা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে কাজ করবে।

শেষ কথা 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে আন্দোলনের নতুন ধারা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তিন দফা দাবির বাস্তবায়নের মাধ্যমে তারা প্রকৌশল খাতের স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের এই পদক্ষেপ সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেবে। আন্দোলন যদি শান্তিপূর্ণ ও কাঠামোগতভাবে পরিচালিত হয়, তবে এটি দেশের শিক্ষানীতি ও প্রকৌশল খাতের সংস্কারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম।

এম আর এম – ১০৫৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button