শিক্ষা

ডাকসু নির্বাচনের প্রচার শুরু, প্রার্থীদের মানতে হবে কঠোর আচরণবিধি

Advertisement

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা আজ থেকে শুরু হয়েছে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার কার্যক্রম চালাতে পারবেন। তবে, ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করেছে কঠোর আচরণবিধি। আচরণবিধি মেনে চলা প্রার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাচনী আচরণবিধি: বিস্তারিত

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেউ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।

প্রচার উপকরণ:

  • প্রার্থীরা সাদা–কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপাতে পারবেন।
  • প্রচারণায় অন্য কারও ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল, স্থাপনা, যানবাহন, গাছ, বেড়া, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন খুঁটি, যেকোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার বা লিফলেট লাগানো নিষিদ্ধ।
  • দেয়াল বা যানবাহনে কালি, চুন বা কেমিক্যাল ব্যবহার করে লিখন, মুদ্রণ বা চিত্রাঙ্কন করা যাবে না।

ক্যাম্প ও মঞ্চ সম্পর্কিত নিয়ম:

  • ফটক, তোরণ, ঘের বা আলোকসজ্জা করা যাবে না।
  • অস্থায়ী প্যান্ডেল, শামিয়ানা ও মঞ্চ স্থাপন করা যাবে।
  • ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ, পরীক্ষার হল বা লাইব্রেরি–রুমে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রচারণা করা যাবে না।

সেবা ও উপহার বিতরণ:
নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো প্রার্থী বা পক্ষ আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বপ্রণোদিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সেবা, উপঢৌকন বা আর্থিক সহযোগিতায় অংশ নিতে পারবে না। এছাড়াও প্রার্থীরা কোনো প্রকার আপ্যায়ন বা বিনামূল্যের খাবার-পানীয় বিতরণ করতে পারবেন না।

সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রা:
প্রার্থী বা প্যানেল যদি সভা-সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করতে চায়, তবে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অনুমতি নিতে হবে।

প্রজেকশন মিটিং ও অনলাইন প্রচারণা:

  • একজন প্রার্থী বা একটি প্যানেলের পক্ষে প্রতিটি হলে একটি প্রজেকশন মিটিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ তিনটি প্রজেকশন মিটিং করার অনুমতি আছে।
  • অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালানো যাবে, তবে এটি হতে হবে আইনসিদ্ধ এবং ইতিবাচক পদ্ধতিতে।

শিক্ষার্থী ও বিশ্লেষকদের দৃষ্টিকোণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, আচরণবিধি কঠোর হলেও এটি ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে। অনেক শিক্ষার্থী উল্লেখ করেছেন, “নির্বাচনকালীন উত্তেজনা অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। এখন কমিশনের বিধি মানলে কোনো প্রার্থীকে অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ডাকসু নির্বাচনে নিয়মকানুন কঠোরভাবে মানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ভোটের সুষ্ঠুতা এবং ছাত্র সমাজে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করে। অনৈতিক প্রচারণা, প্ররোচনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাব প্রতিরোধে আচরণবিধি অপরিহার্য।”

নির্বাচন কমিশনের সতর্কবার্তা

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার বা আইন অনুযায়ী শাস্তি হতে পারে।

কমিশন আরও জানিয়েছে, “প্রার্থীরা যেন ভোটারদের শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে। প্ররোচনা, হুমকি বা আক্রমণাত্মক প্রচারণা করা যাবে না। আমাদের লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল নির্বাচন নিশ্চিত করা।”

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনের ছাত্রজীবনে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

  • ছাত্র নেতৃত্ব: ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব এবং পরিচালনায় অভিজ্ঞতা লাভ করে।
  • গণতান্ত্রিক শিক্ষা: নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ভোটের গুরুত্ব বোঝায়।
  • শিক্ষার্থীর সেবামূলক কর্মকাণ্ড: নির্বাচিত প্রার্থীরা হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “নির্বাচন শুধু ক্ষমতার লড়াই নয়। এটি শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীলতা, সমন্বয় এবং নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। সঠিক আচরণবিধি মানলে এই শিক্ষা আরও কার্যকর হবে।”

গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা

গত কয়েক বছরে ডাকসু নির্বাচন বেশ কিছু সময় উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু চলতি বছর আচরণবিধি কঠোর হওয়ায় নির্বাচন অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশন কঠোরভাবে নজরদারি করবে। ক্যাম্পাসে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো প্রার্থী বা ভোটার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটায়।

শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি

ছাত্ররা ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ভোটারদের সচেতন করার জন্য হলগুলোতে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হচ্ছে।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারুক। প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করবে ভোটের সুষ্ঠুতা।”

অনলাইন প্রচারণার গুরুত্ব

আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে প্রচারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থীরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরছে। তবে এটি হতে হবে ইতিবাচক এবং নৈতিকভাবে।

  • ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবের মাধ্যমে প্রার্থীরা তাদের কর্মসূচি এবং প্রজেকশন মিটিং-এর সময়সূচি জানাচ্ছে।
  • কোনও প্রকার ভুয়া তথ্য প্রচার বা অপপ্রচার নিষিদ্ধ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ডিজিটাল প্রচারণা শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আইনগতভাবে সচেতন প্রচারণা নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ করে তোলে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এবং হল সংসদ নির্বাচন শুধু শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ব্যবহার নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মঞ্চ।

নির্বাচন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের একযোগে সচেতন ও শৃঙ্খলিত প্রচারণা নিশ্চিত করতে হবে। আচরণবিধি মেনে চললে এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও সমৃদ্ধ ক্যাম্পাস পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে।

MAH – 12485 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button