রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন না মেলায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনে শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এর ফলে ঢাকা-রাজশাহী রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন ও প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছে।
অবরোধ শুরু ও পরিস্থিতি
১৩ আগস্ট বুধবার সকাল ৯ টার দিকে উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের রেলগেটে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা বিভিন্ন প্রতীকী স্লোগান দিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। বর্তমানে ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ নিরাপত্তার জন্য অবস্থান নিয়েছে।
দীর্ঘদিনের দাবির পটভূমি
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার অনুমোদন এখনও মেলেনি। প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পার হলেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই দ্রুত ডিপিপি অনুমোদন ও ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করছে।
গত ২৬ জুলাই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের দিন থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে এই দাবি জানিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। বিক্ষোভকারীরা বগুড়ানগরবাড়ী মহাসড়কে পথ অবরোধ, প্রতীকী ক্লাস, শেকল ভাঙার গান ও পথ নাটকের মাধ্যমে তাঁদের দাবি তুলে ধরেছে।
চলমান আন্দোলনের ধারা
শিক্ষার্থীরা একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার হাটিকুমরুল গোলচত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার মহাসড়ক অবরোধের ফলে দুই ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি নবীনবরণ ও সেমিনার কর্মসূচিও চালানো হয়।
রেল যোগাযোগের ব্যাঘাত ও প্রশাসনের অবস্থান
উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মনিরুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তার জন্য উল্লাপাড়া থানা পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, চিলাহাটি থেকে ঢাকাগামী ননস্টপ চিলাহাটি এক্সপ্রেস এবং ঢাকাগামী ননস্টপ কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি তাদের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অবরোধের কারণে ট্রেন চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটেছে এবং আপাতত ঢাকা-রাজশাহী রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জামতৈল রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়িয়ে রয়েছে। একই সঙ্গে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন লাহিড়ী মোহমপুর স্টেশনে অবস্থান করছে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডিপিপি: বিস্তারিত
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যার স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাসটি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকায় নির্মিত হবে। এই ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদনের বিলম্ব।
ডিপিপি হল একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যেখানে প্রকল্পের লক্ষ্য, পরিকল্পনা, বাজেট এবং সময়সীমাসহ বিস্তারিত তথ্য থাকে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এই অনুমোদন না মেলায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন আটকে আছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, ক্যাম্পাসের স্থাপনার কারণে শিক্ষার মান উন্নত হবে এবং শিক্ষার্থীদের উন্নত পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ মিলবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির গুরুত্ব ও সরকারের ভূমিকা
শিক্ষার্থীদের দাবি দ্রুত অনুমোদন ও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ একটি স্বাভাবিক ও যৌক্তিক দাবি। দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকার ফলে তাদের মাঝে হতাশা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দাবি আদায়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
সরকারের উচিত এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া এবং দ্রুত ডিপিপি অনুমোদনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করা। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত পরিবেশ উন্নয়ন হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।
সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
ঢাকা-রাজশাহী রেলপথে অবরোধের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। অনেকেই গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। পাশাপাশি রেল যোগাযোগের বন্ধ হওয়ায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটেছে। এতে স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে।
তবে আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য এই ধরনের প্রতিবাদ প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরবর্তী পরিকল্পনা ও উত্তরণ
শিক্ষার্থীরা আগামী দিনে আরও বড় কর্মসূচি গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদের মতে, ডিপিপি অনুমোদন না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের দাবি শুনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং যানবাহন ও যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করছে।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। অবরোধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই এই সংকট মিটিয়ে সকলের শিক্ষা জীবন স্বাভাবিক হবে।
MAH – 12291 , Signalbd.com



