শিক্ষা

মেধাবী জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম আজ

Advertisement

দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য মেধাবী জাতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার। তিনি বলেন, মেধাবী জাতি গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ফেরাতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

শনিবার (২ আগস্ট) সকাল ১০টায় ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ঢাকা কলেজের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শিক্ষা ক্যাডারের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছিল বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন।

শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে

শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “বর্তমান সময় একটি অস্থির সময়। এ সময়কে সচেতনতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা না হলে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন পূরণ কঠিন হয়ে পড়বে।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের উচিত তাদের দায়িত্ব পালন করাই, আর সরকারের উচিত তাদের সঠিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেয়া।”

তিনি উল্লেখ করেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাকাঠামো তৈরির জন্য কাজ করছে। যাতে দেশের তরুণরা বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের সেবা করতে পারে।

জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষকদের হাতেই

শিক্ষকরা দেশের ভবিষ্যত গড়ার কারিগর। শিক্ষকরা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হন এবং শিক্ষার মান উন্নত করতে মনোনিবেশ করেন, তবে দেশের শিক্ষার গুণগত মানের পাশাপাশি জাতীয় অগ্রগতিও নিশ্চিত হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “তরুণ প্রজন্মকে শ্রেণীকক্ষে ফিরিয়ে আনার এখন সময় এসেছে। শ্রেণীকক্ষই হবে সেই স্থান যেখানে দেশের ভবিষ্যত গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় বুনিয়াদ তৈরী হবে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা যখন দেশকে গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের উপলব্ধি করবেন, তখনই আমাদের জাতি হবে মেধাবী জাতি।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শিক্ষার প্রভাব

আলোচনা সভায় বক্তারা এও উল্লেখ করেন যে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জাতীয়তাবোধ ও শিক্ষার গুরুত্বকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না, বরং দেশের শিক্ষার অবস্থা এবং শিক্ষকদের অবস্থান নিয়ে জাতীয় সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, “এই আন্দোলন তরুণদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহকে জাগিয়ে তুলেছে এবং শিক্ষকদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে।”

শিক্ষার আধুনিকায়নে সরকারের প্রচেষ্টা

বর্তমানে বাংলাদেশের সরকার শিক্ষার আধুনিকায়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম, অনলাইন ক্লাসের উন্নয়ন, স্কুল-কলেজে শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, “শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ভিত্তি।”

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী দিনে শিক্ষকদের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে আরও ভালোভাবে।

শিক্ষকদের জন্য প্রাপ্য সুবিধা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা জরুরি

শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে যথাযথ বাজেট বরাদ্দ ও সুযোগ-সুবিধা। বর্তমানে শিক্ষকদের অধিকাংশ পেশাগত ও আর্থিক সুবিধা অপর্যাপ্ত বলে মত প্রকাশ করেন অনেক বিশ্লেষক। এর ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষক বিদেশে চলে যাচ্ছেন বা অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন, প্রশিক্ষণ ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তখনই তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন এবং জাতি গড়ার কাজে অনুপ্রাণিত হবেন।”

তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ানোর নতুন পদ্ধতি জরুরি

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তরুণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখা এবং তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিক্ষাকে আরও আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং বাস্তবমুখী করতে হবে।

চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “শিক্ষাকে শুধু বইপত্রের পড়াশোনা নয়, বরং জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত করে শিক্ষার্থীদের শেখানো দরকার।” তিনি শিক্ষকদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

দেশের উন্নয়নে শিক্ষকদের অবদান

শিক্ষকরা শুধু পাঠদান করেন না, তারা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নেরও অন্যতম চালিকাশক্তি। একজন ভাল শিক্ষক দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তৈরি করেন।

চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে আরও উজ্জ্বল করতে পারেন।”

শিক্ষার মানোন্নয়নে সকলের একযোগে কাজ করা জরুরি

জাতির মেধাবী ভবিষ্যত গড়ার জন্য শুধুমাত্র শিক্ষকদের নয়, সরকারের, অভিভাবকদের এবং সমাজের প্রত্যেক সদস্যের সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। সকলের সহযোগিতায় শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে এবং দেশের তরুণরা বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার স্পষ্টভাবেই বুঝিয়েছেন যে, “মেধাবী জাতি গঠনের মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষক”। শিক্ষকরা যতই সম্মানিত ও প্রেরণাদায়ক হবেন, ততই তরুণ প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই শিক্ষকদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি।

 MAH – 12086 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button