শিক্ষা

অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম হয়েও শিক্ষক নিয়োগের ভাইভায় ডাক পাননি আজমল

Advertisement

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগের ভাইভায় ডাক পাননি আজমল হোসেন। প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।

আজমলের যোগ্যতা ও শিক্ষাজীবন

মাগুরা জেলার সন্তান মো. আজমল হোসেন ২০০১–০২ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগে ভর্তি হন।
২০০৫ সালে অনার্স এবং ২০০৬ সালে মাস্টার্স পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

ফলে তার একাডেমিক রেকর্ড নিঃসন্দেহে চমৎকার। শিক্ষকতার যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন আজমল।

ভাইভায় ডাক না পাওয়ার ঘটনা

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আগামী ২২ জুলাই ভাইভা বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

তবে এতটা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আজমল সেই ভাইভায় ডাক পাননি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে নিজের ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

আগে কী ঘটেছিল? 

২০১৯ সালের শিক্ষক নিয়োগের সময় তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলকে অতিরিক্ত শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।
আজমলের মতে, এই শর্ত তার প্রতি ‘অন্যায়’ ছিল।

তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং কোর্টের নির্দেশনায় আবেদন করার সুযোগ পান।
কিন্তু সে সময় ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়নি এবং বিষয়টি স্থগিত থাকে।

নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আশার আলো

বর্তমান প্রশাসনের অধীনে সম্প্রতি নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল—

  • পূর্বে যারা আবেদন করেছেন, তাদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই।
  • অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম থেকে সপ্তম স্থান অধিকারীরা আবেদন করতে পারবেন।

এই শর্ত অনুযায়ী আজমলের দাবি, তিনি পুরোপুরি যোগ্য।
তিনি বলেন,

“আমি বিভাগে প্রথম হয়েছি। গত ২০ বছরেও বিভাগে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তবুও আমাকে ভাইভায় ডাক দেওয়া হয়নি—এর ব্যাখ্যা কোথায়?”

বিভাগের বক্তব্য ও ব্যাখ্যা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারসি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শফিউল্লাহ জানান—

আগের নিয়োগে আজমলের আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়নি, কারণ তিনি শর্ত পূরণ করতে পারেননি।
পরে যখন নতুন বিজ্ঞপ্তি আসে, তখন বলা হয় পুরাতন প্রার্থীদের নতুন করে আবেদন করার দরকার নেই।

কিন্তু যেহেতু আজমলের পূর্বের আবেদন বাতিল হয়েছিল, তাই সেটি ধারাবাহিকভাবে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
এছাড়া নতুন বিজ্ঞপ্তিতে শর্ত পূরণ করলেও তিনি নতুন করে আবেদন করেননি, এ কারণে তাকে ভাইভায় ডাকা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

আজমলের বক্তব্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে আসে—

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি একজন প্রার্থী শুধুমাত্র আবেদন সংক্রান্ত বিভ্রান্তির কারণে বাদ পড়ে যান, তাহলে সেটি কি আদৌ ন্যায্য?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের কারণে যোগ্যদের প্রতি অন্যায় হচ্ছে কিনা—সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন,

“যোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হলে শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার অপচয় হয়। শিক্ষক নিয়োগে প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।”

“আমি বৈধ আবেদনকারী হয়েও ভাইভায় ডাক পাইনি—এটা আমার প্রতি অবিচার”—মো. আজমল হোসেন

সারসংক্ষেপ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মো. আজমল হোসেন। কিন্তু তিনি ২২ জুলাইয়ের শিক্ষক নিয়োগ ভাইভায় সুযোগ পাননি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আজমল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আজমলের এই অভিজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।শিক্ষায় মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন না হলে সেটি পুরো সিস্টেমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—শুধু নিয়ম নয়, ন্যায্যতাও কি দেখবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন?

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button