পড়াশোনায় ব্যর্থতা জীবনের শেষ কথা নয়। ইতিহাসে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা পরীক্ষায় ফেল করেছেন, কিন্তু জীবনের আসল পরীক্ষায় হয়েছেন সফল। তাদের জীবন আমাদের শেখায়—সফলতা আসে আত্মবিশ্বাস, পরিশ্রম ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে।
জ্যাক মা: বারবার প্রত্যাখ্যানের পরেও সাফল্যের শিখরে
চীনের অন্যতম বড় ই-কমার্স কোম্পানি আলিবাবা‘র প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা জীবনে বহুবার ব্যর্থ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গণিতে পেয়েছিলেন মাত্র ১ নম্বর! একাধিকবার চেষ্টা করেও ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। চাকরির ক্ষেত্রেও ভাগ্য সহায় হয়নি—কেএফসি-তে ২৪ জনের মধ্যে একমাত্র তিনিই বাদ পড়েন।
তবুও তিনি থেমে থাকেননি। নিজের বিশ্বাসে অটল থেকে শুরু করেন আলিবাবা। প্রথমদিকে কেউ বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে তার উদ্যোগ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আজ তিনি কোটি তরুণের অনুপ্রেরণা।
স্টিভ জবস: কলেজ ড্রপআউট থেকে প্রযুক্তির রাজপুত্র
অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস কলেজ শেষ করেননি। পড়াশোনায় আগ্রহ কম থাকলেও সৃষ্টিশীলতা, প্রযুক্তি আর নতুন কিছু করার জেদ তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।
মাত্র ২০ বছর বয়সে গ্যারেজে বসেই শুরু করেন অ্যাপলের যাত্রা। চ্যালেঞ্জ ও ব্যর্থতা সঙ্গী করেই তিনি তৈরি করেন এমন কিছু পণ্য—যেগুলো বদলে দিয়েছে পুরো প্রযুক্তি দুনিয়া।
বিল গেটস: হার্ভার্ড ছেড়ে গড়েছেন সফটওয়্যারের সাম্রাজ্য
বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও তা শেষ করেননি। বরং তরুণ বয়সেই শুরু করেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠার কাজ।
তিনি প্রমাণ করেছেন—ডিগ্রি নয়, উদ্ভাবনী শক্তিই বড়। আজ তার প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ।
ধীরুভাই আম্বানি: গড়পড়তা ছাত্র থেকে ভারতের শিল্প সাম্রাজ্যের জনক
ভারতের সফল ব্যবসায়ী ধীরুভাই আম্বানি স্কুলে ছিলেন সাধারণ মানের ছাত্র। পড়ালেখা খুব বেশি দূর এগোয়নি। তবে ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস ও কঠোর পরিশ্রম তাকে পৌঁছে দেয় সাফল্যের শীর্ষে।
ছোট একটি দোকান থেকে শুরু করে গড়ে তোলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ—ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
উইনস্টন চার্চিল: ফেল করা ছাত্র থেকে ইতিহাস বদলে দেওয়া নেতা
উইনস্টন চার্চিল ছিলেন ইংল্যান্ডের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রী। স্কুলজীবনে বারবার ফেল করেছেন, শিক্ষকরা বলতেন—তিনিও নাকি “কিছুই হতে পারবেন না”।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে দেন নিজের পরিচয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনকে নেতৃত্ব দিয়ে হয়ে ওঠেন ইতিহাসের অন্যতম সফল নেতা। তিনি প্রমাণ করেন—চেষ্টা করলে অসম্ভব কিছুই নয়।
সাফল্যের জন্য নম্বর নয়, দরকার আত্মবিশ্বাস ও সাহস
উপরের উদাহরণগুলো প্রমাণ করে, পরীক্ষায় ফেল করলেও জীবন থেমে থাকে না। ব্যর্থতা থেকে শিখে আবার শুরু করলেই সাফল্য ধরা দেয়।
অনেক সময় সমাজ বা পরিবার আমাদের বলেই দেয়, “তুমি ফেল করেছ, তুমি পারবে না”—কিন্তু যারা সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যায়, তারাই ইতিহাস গড়েন।
“পরীক্ষার নম্বর নয়, জীবনের মাপকাঠি হলো চেষ্টা আর আত্মবিশ্বাস”—একজন সফল উদ্যোক্তা
সারসংক্ষেপ
“তুমি ফেল করেছ, তুমি কিছুই হতে পারবে না”—এই কথাটি আমরা অনেকেই শুনেছি। সমাজে এখনো একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে, শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো করলেই জীবনে সফল হওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। এমন বহু মানুষ আছেন, যারা শিক্ষাজীবনে ছিলেন পিছিয়ে, কিন্তু জীবনে হয়েছেন সাফল্যের প্রতীক।
শিক্ষাজীবনের একটি ব্যর্থতা জীবনের সবকিছুকে নির্ধারণ করে না। আসল প্রশ্ন হলো—আপনি ব্যর্থতার পর কী করলেন? দাঁড়িয়ে গেলেন, নাকি হার মেনে নিলেন?
আজ যারা সফল, তারা হয়তো একসময় পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন। কিন্তু তারা জীবনকে দেখেছেন নতুন চোখে, পেয়েছেন নতুন পথ।
তাহলে আপনি কী ভাবছেন? আপনি কি আপনার ব্যর্থতাকে সাফল্যের সিঁড়িতে রূপ দিতে প্রস্তুত?
এম আর এম – ০২৭৬, Signalbd.com



