শিক্ষা

সব বোর্ডেই গণিতে ভরাডুবি, শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ

Advertisement

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গণিত বিষয়ে আশঙ্কাজনক হারে পাসের হার কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাঠদানের গুণগত মান, শিক্ষকের অভাব ও শিক্ষার্থীদের ভয়–এই সমস্যার মূলে।

ফলাফলের বিস্তারিত চিত্র

১০ জুলাই বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে মাত্র একটি বোর্ডে গণিত বিষয়ে পাসের হার তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৮.৭২ শতাংশ হলেও বাকি সব বোর্ডে এই হার আশানুরূপ নয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৭৫.১৪% শিক্ষার্থী। রাজশাহী বোর্ডে কিছুটা ভালো ফল—৮৬.৫২%। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৮৫.০২%।
কিন্তু কুমিল্লা (৭২.০১%), দিনাজপুর (৭১.৩৫%) এবং ময়মনসিংহ (৬৪.২৭%) বোর্ডের ফল ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ।
বরিশাল বোর্ডে পাস করেছে মাত্র ৬৪.৬২% শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮১.৫৩% এবং সিলেট বোর্ডে ৮৩.১৭% শিক্ষার্থী গণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার কম—৭৯.৭৩%।

পূর্বপটভূমি ও পূর্ববর্তী ফলাফল

গত কয়েক বছর ধরেই গণিতে শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যদিও বিগত কয়েক বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়লেও গণিত বিষয়ে দুর্বলতা কাটেনি। ২০২৪ সালেও গণিত বিষয়ে ভরাডুবির অভিযোগ ছিল, তবে এবারের চিত্র আরও ভয়াবহ।
শিক্ষাবিদদের মতে, গণিত শেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে এবং তারা বিষয়টিকে ভয় হিসেবে দেখছে।

সমস্যার কারণ ও বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, গণিতে খারাপ ফলাফলের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দায়ী—

  • শিক্ষকের সংকট: অনেক স্কুলেই দক্ষ গণিত শিক্ষক নেই। ফলে মানসম্মত পাঠদান হয় না।
  • অনুশীলনের অভাব: শিক্ষার্থীদের হাতে পর্যাপ্ত অনুশীলন ও সমস্যা সমাধানের সুযোগ নেই।
  • পাঠ্যবই বিমুখতা: শিক্ষার্থীরা গাইড ও কোচিংয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
  • ভয়ের সংস্কৃতি: গণিতকে ভয় পাওয়ার প্রবণতা এখনো দূর হয়নি।
  • পরীক্ষার কাঠামো: অনুশীলনমূলক প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা অনভ্যস্ত, যা পরীক্ষায় খারাপ করার অন্যতম কারণ।

একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক বলেন, “গণিত শেখানোকে যদি হাতে-কলমে ও উৎসাহজনক না করা যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে না।”

শিক্ষাবিদ ও বোর্ড কর্মকর্তাদের মতামত

ঢাকা বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গণিত শেখানোর পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। প্র্যাকটিকাল ক্লাস, গ্রুপ অ্যাকটিভিটি এবং আনন্দঘন শিক্ষার পরিবেশ ছাড়া এই ভরাডুবি চলতেই থাকবে।”

এক শিক্ষাবিদ বলেন, “শুধু ভালো রেজাল্ট নয়, গণিত বুঝে শেখা জরুরি। সরকার ও শিক্ষা বোর্ডকে এখনই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”

প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এসএসসি ফলাফল শুধু একজন শিক্ষার্থীর নয়, পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মানকে প্রতিফলিত করে। গণিতে এই অবনমন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদ্বেগজনক। STEM (Science, Technology, Engineering, Math) নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য গণিতে দুর্বলতা জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।

সরকার যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়—শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রম সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতভীতি দূর করতে উদ্যোগ না নেয়—তাহলে এই অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।

“গণিতে ভয় নয়, ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতেও আমরা একই ফলাফল দেখতে পাব”—একজন শিক্ষাবিদ।

সারসংক্ষেপ  

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দেশের সব শিক্ষাবোর্ডেই গণিত বিষয়ে ভরাডুবি ঘটেছে। ফল প্রকাশের দিনই বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় গণিতে পাসের হার সবচেয়ে কম। এই চিত্র শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

সব বোর্ডেই গণিতে পাসের হার কমে যাওয়া একটি জাতীয় শিক্ষা সংকেত। এই সংকট কাটাতে শিক্ষকদের মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের মনোবল বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষানীতি পুনর্বিবেচনা জরুরি হয়ে পড়েছে।


তবে বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থার উন্নতি নির্ভর করছে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভবিষ্যৎ সংস্কার ও সদিচ্ছার ওপর।


এম আর এম – ০২৬৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button