দেশের সকল শিক্ষা বোর্ডের সম্মিলিত ফলাফলের ভিত্তিতে জানা গেছে, এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় ফেল করেছে ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি।
পরীক্ষার্থী ও ফলাফল:
এই বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মোট ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সফল হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। অন্যদিকে অকৃতকার্য হয়েছে মোট ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী।
পুরুষ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মোট ৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৮১ জন, অর্থাৎ প্রায় ৩৪ শতাংশ ছেলেরা ফেল করেছে। অন্যদিকে মেয়েদের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩৮৯ জন, যাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪৫ জন। মেয়েদের অকৃতকার্যতা প্রায় ২৯ শতাংশ।
এসব তথ্য স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে, মেয়েদের তুলনায় এবার ছেলেদের অকৃতকার্যের হার বেশি।
পাশের হার কমেছে আগের বছরের তুলনায়
এবারের গড় পাশের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ, যা গত বছরের ৮৩.৪ শতাংশের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক ফলাফল কমেছে।
বিশ্লেষণ ও কারণসমূহ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইন শিক্ষা ও দুর্যোগজনিত বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় প্রভাব পড়েছে। তবে এর মধ্যে বিশেষভাবে ছেলেদের পড়াশোনার অনমনীয়তা ও অনুশীলনের অভাব তাদের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
- কেন ছেলেদের ফলাফল পিছিয়ে?
- করোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
- শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক
শিক্ষাবোর্ডের মন্তব্য
শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছি, ছেলেদের ক্ষেত্রে পড়াশোনায় মনোযোগ কম থাকায় ফেলের হার বেশি হয়েছে। আগামীতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হবে যাতে এই পার্থক্য কমানো যায়।”
মেয়েদের ফলাফল তুলনায় ভালো কেন?
মেয়েদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হওয়ার পেছনে রয়েছে পড়াশোনায় দায়িত্বশীলতা, সময় ব্যবস্থাপনার ভালো অভ্যাস, এবং পরীক্ষার প্রতি মনোযোগ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে বেশি ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করে থাকে, যা তাদের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়।
এসএসসি পরীক্ষার গুরুত্ব
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাজীবনের অন্যতম প্রধান মাইলস্টোন। এটি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য দরজার মতো কাজ করে। তাই এই পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষাব্যবস্থার মান ও শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতির প্রতিফলন।
আগামী দিনে করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফলাফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় কার্যকর পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ বাড়াতে হবে। প্রয়োজন হবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পাঠ্যপুস্তকের মান উন্নয়ন, এবং ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি।
ছেলেদের পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়াতে পারিবারিক সমর্থন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।
সারমর্মে:
- এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ছেলেদের ফেলের হার বেশি।
- মোট ৬ লাখ ৬৬ হাজার শিক্ষার্থী ফেল করেছে।
- ছেলেদের পাসের হার ৬৬ শতাংশের নিচে, মেয়েদের পাসের হার ৭০ শতাংশের বেশি।
- গড় পাসের হার গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে।
- শিক্ষাবোর্ড ও বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শিক্ষার ভবিষ্যৎ ও আমাদের করণীয়
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য উন্নত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে, সে জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও সচেতনতার। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্য খেয়াল রাখা, এবং প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে নতুন যুগের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা আবশ্যক।



