বিশ্ব

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প: নিহত ৮০০ ছাড়াল, আহত ২,৮০০ জনেরও বেশি

Advertisement

২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর, আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার ফলে নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২,৮০০ জন। ভূমিকম্পটি কুনার ও নাঙ্গারহার প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে ভূমিকম্পের গভীরতা এবং ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।

ভূমিকম্পের সময় ও মাত্রা

ভূমিকম্পটি ৩১ আগস্ট ২০২৫ রাত ১১:৪৭ (স্থানীয় সময়) আফগানিস্তানের নাঙ্গারহার প্রদেশের জলালাবাদ শহরের নিকটবর্তী একটি পাহাড়ি অঞ্চলে আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬.০, এবং এটি ৮ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়েছিল। ভূমিকম্পের পরপরই বেশ কয়েকটি আফটারশক অনুভূত হয়, যা উদ্ধার কাজকে আরও জটিল করে তুলেছে।

কুনার প্রদেশে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতি

কুনার প্রদেশে ভূমিকম্পের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি ছিল। এখানে শত শত বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন, এবং বাইরের সহায়তা না পেলে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

উদ্ধার তৎপরতা ও সহায়তা

আফগান সরকার এবং জাতিসংঘের সহায়তায় উদ্ধার তৎপরতা চলছে। হেলিকপ্টার এবং সামরিক বাহিনী আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে। তবে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে উদ্ধার কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ভূমিকম্পের প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

ভূমিকম্পের ফলে আফগানিস্তানে মানবিক সংকট আরও তীব্র হয়েছে। দেশটি ইতিমধ্যে খাদ্য, পানি, আশ্রয় ও চিকিৎসা সহায়তার অভাবে ভুগছে। ভূমিকম্পের কারণে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আফগানিস্তানের মানুষের পাশে আছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”

ভূমিকম্পের পূর্ববর্তী ঘটনা

আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হেরাত প্রদেশে ৬.৩ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ১,৫০০ জন নিহত হয়েছিল। এছাড়াও, ২০২২ সালের জুনে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ১,০০০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছিলেন। ভূমিকম্পের কারণে আফগানিস্তানে বারবার মানবিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।

ভূমিকম্পের কারণ ও ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থা

আফগানিস্তান হিন্দুকুশ পর্বতমালার অংশ, যা ইউরেশিয়ান ও ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থল। এই অঞ্চলে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে। ভূমিকম্পের সময় এবং পরবর্তী আফটারশকগুলোর কারণে ভূমিধস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের পর সহায়তা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা উদ্ধার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করছে এবং মানবিক সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। তবে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে সহায়তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

আফগানিস্তানে ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্প একটি বড় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। নিহতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন ২,৮০০ জনেরও বেশি। উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে কাজটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা এবং আফগান সরকারের উদ্যোগের মাধ্যমে এই বিপর্যয়ের পরবর্তী প্রভাব মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

MAH – 12594,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button