আঞ্চলিক

সুচিকিৎসার জন্য নুরকে বিদেশ পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

Advertisement

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি এবং জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা নুরুল হক নুরের গুরুতর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, তার শারীরিক অবস্থার জটিলতা কাটিয়ে উঠতে উন্নত চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। এ পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নির্দেশ দিয়েছেন নুরকে বিদেশে পাঠানোর জন্য।

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নুরের পরিবারের সাক্ষাৎ

মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নুরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন। সাক্ষাতে নুরের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মারিয়া আক্তার।

তিনি জানান, নুরুল হক নুরের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে, নাকের হাড় ভেঙেছে, চোয়াল ও মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এসব কারণেই তার সুচিকিৎসা দেশের বাইরে নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা ও সরকারের সিদ্ধান্ত

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন নুরকে বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, “এ ঘটনায় আমরা সবাই গভীরভাবে মর্মাহত। তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, এ হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চলছে। ঘটনার পেছনের কারণ ও দায়ীদের খুঁজে বের করতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

উপদেষ্টাদের উপস্থিতি ও তদন্ত কমিটি গঠন

এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, ঘটনাটির তদন্তের জন্য বিচারপতি আলী রেজার নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। আগামীকালের মধ্যেই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ হবে। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নুরুল হক নুর: আন্দোলন থেকে রাজনীতির মঞ্চে

ছাত্র অধিকার আন্দোলনের নেতা হিসেবে নুরুল হক নুরের উত্থান ঘটে ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়। এরপর থেকেই তিনি আলোচিত ও সমালোচিত দুই মঞ্চেই সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক জুলাই অভ্যুত্থানে তার ভূমিকা রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি মাঠে সক্রিয় থেকেছেন। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক হামলার শিকার হয়েছেন। সাম্প্রতিক হামলাটি তার রাজনৈতিক যাত্রার জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

নুরকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে তার দল ও সমর্থকরা। তারা মনে করছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানবিকতারই প্রতিফলন।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকেও এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।

ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নুরুল হক নুর সুস্থ হয়ে রাজনীতিতে ফিরতে পারলে তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। তবে সুস্থ হতে সময় কতটা লাগবে, সেটি এখনো অনিশ্চিত।

এদিকে, তদন্তের ফলাফল ও সরকারের পদক্ষেপ রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, এ ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে ভবিষ্যতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরিশেষে

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় নুরুল হক নুরকে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তার সুস্থতা শুধু পরিবারের জন্য নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন দেখার বিষয়, বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শেষে কবে তিনি আবার রাজনীতির মাঠে ফিরতে পারবেন।

এম আর এম – ১১৪৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button