
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের একচেটিয়া বিজয়ের পর আনন্দ উদযাপনের প্রচলিত মিছিল বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রশিবির। তারা জানিয়েছেন, বিজয় উদযাপনের জন্য তারা মিছিল করবে না, বরং সৃষ্টিকর্তার কাছে ‘সিজদার মাধ্যমে’ শুকরিয়া আদায় করবে।
বিজয়ের ফলাফল ও প্রতিক্রিয়া
ভোট গ্রহণের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর শনিবার বিকালে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, ২৫টি পদে ২০টিতে জয় অর্জন করেছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমাদের প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। ঢাবির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিক্ষার্থীরাই বিজয়ী হলেন।”
তিনি আরও জানান, “যে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির পরিচয় দেয়া ছিল হত্যাযোগ্য, সেই বিজয় মহান রবের একান্ত অনুগ্রহ। আমরা দেশের কোথাও কোনো আনন্দ মিছিল করব না, শুধু মহান রবের নিকট সিজদার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করব।”
ছাত্রশিবিরের ঐতিহ্য ও নির্বাচন
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়। প্রায় ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এবারের জাকসু নির্বাচনে তারা বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ জয় লাভ করেছে।
ছাত্রশিবিরের বক্তব্যে বলা হয়েছে, তারা শুধু নির্বাচনে জয়লাভের জন্য উদযাপন করছেন না, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দায়িত্ব পালনেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিজয়ের পর পরিকল্পনা: মিছিল নয়, সিজদায় শুকরিয়া
ছাত্রশিবির বিজয়ের পর ধূমধাম, বাহারি মিছিল বা কোনো বাহ্যিক আনন্দ উদযাপন এড়াচ্ছে। বরং তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য সিজদার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করা হবে।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, “কারও প্রতি আমাদের কোনো অনুযোগ বা বিদ্বেষ নেই। নিজেদের ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব। গর্ব ও অহংকার আমাদের পায়ের ধুলো, আর উদারতা ও বিনয় হবে আমাদের ব্যবহারের অলংকার।”
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের এই একচেটিয়া জয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। তাদের এই নম্র ও আধ্যাত্মিক উদযাপন পদ্ধতি অনেকের কাছে প্রশংসনীয় হিসেবে ধরা পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং বিজয়ীদের আচরণকে প্রশংসনীয় হিসেবে অভিহিত করেছে।
নির্বাচনের গুরুত্ব ও ভবিষ্যৎ প্রভাব
জাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের জয় প্রমাণ করছে, শিক্ষার্থীরা এখনও নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সমর্থন করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই বিজয় শুধু নির্বাচনের ফলাফল নয়, বরং একটি সামাজিক ও নৈতিক বার্তাও বহন করছে, যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
সমাজে শিক্ষার্থীর দৃষ্টান্ত
ছাত্রশিবিরের এই বিজয় উদযাপনের পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। বাহ্যিক ধূমধাম বা অহংকারের বদলে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ গ্রহণ করলে সমাজে শিক্ষার্থীর প্রতিক্রিয়া এবং সম্মান বৃদ্ধি পায়।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, “গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক যাত্রা ও নানান ঐতিহ্যের প্রতীক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হোক সম্প্রীতির অনন্য উপমা। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ হয়ে উঠুক সবার বাংলাদেশ।”
পরিশেষে
ছাত্রশিবিরের একচেটিয়া জয় এবং মিছিল না করে সিজদায় শুকরিয়া আদায়ের সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ ও নৈতিক উদযাপনের একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি শুধু রাজনৈতিক বিজয় নয়, বরং শিক্ষার্থী সমাজে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সচেতনতার প্রতীক।
এম আর এম – ১৩১৬,Signalbd.com