
২০২৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর, বেলজিয়াম সরকার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২টি নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্তও নিয়েছে দেশটি। এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন এক মোড় নিয়ে এসেছে এবং ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি: বেলজিয়ামের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভো এক বিবৃতিতে জানান, “ফিলিস্তিনে, বিশেষ করে গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায়” বেলজিয়াম এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা নিউইয়র্ক ঘোষণা স্বাক্ষরকারীদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি। এর লক্ষ্য হলো দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান— অর্থাৎ ইসরায়েলের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।”
এই পদক্ষেপটি বেলজিয়ামের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ এটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল। এর মাধ্যমে বেলজিয়াম আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানাল।
ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা: বেলজিয়ামের কঠোর অবস্থান
বেলজিয়াম সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২টি “কঠোর” নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রয়েছে দখলকৃত অঞ্চলের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি ক্রয়নীতি পুনর্বিবেচনা এবং হামাস নেতাদের বেলজিয়ামে ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ ঘোষণা করা।
এই পদক্ষেপটি বেলজিয়ামের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা, যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: সমালোচনা ও সমর্থন
বেলজিয়ামের এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েল এই সিদ্ধান্তকে “হামাসকে পুরস্কৃত করা” হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিন জাতীয় কর্তৃপক্ষ বেলজিয়ামের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং অন্যান্য দেশকেও একই পথে হাঁটার আহ্বান জানিয়েছে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার পর বেলজিয়ামও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিল, যা আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান: বিভক্ত মতামত
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে বিভক্তি রয়েছে। কিছু দেশ, যেমন আয়ারল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যদিকে, জার্মানি, হাঙ্গেরি ও চেক প্রজাতন্ত্র ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে। ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে গাজা যুদ্ধের পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করার চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া: পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখলের পরিকল্পনা
বেলজিয়ামের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশ দখলের পরিকল্পনা করছে। ইসরায়েলের দাবি, এই অঞ্চলগুলো আইনি দিক থেকে দখল নয়, বরং বিতর্কিত এলাকা। তবে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এগুলোকে দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে দেখে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ: শান্তির পথে অগ্রগতি
বেলজিয়ামের এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক মহলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানে নতুন আলো ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সরাসরি আলোচনায় বসে সমাধানে পৌঁছাচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই ধরনের পদক্ষেপ সমর্থনযোগ্য।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি ও ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বেলজিয়াম আন্তর্জাতিক মহলে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে— মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের। এটি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
MAH – 12609, Signalbd.com