
বহু দশকের বৈরিতার পর আজারবাইজানে মুখোমুখি বসেছেন ইসরায়েল ও সিরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যদিও সিরিয়ার সরকারিভাবে বিষয়টি অস্বীকার করছে, তবে ভেতরের সূত্র বলছে, এটি মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
হঠাৎ আলোচনায় সিরিয়া-ইসরায়েল গোপন বৈঠক
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা এবং ইসরায়েলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও সিরিয়ার সরকারি সূত্র এই বৈঠকের সত্যতা অস্বীকার করেছে, তথাপি সিরিয়ার প্রেসিডেন্সির ঘনিষ্ঠ মহল বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
সূত্র অনুযায়ী, আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল নিরাপত্তা চুক্তি, ইরানের প্রভাব, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার, লেবানন ও গাজার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা।
কারা কারা ছিলেন আলোচনায়?
এই বৈঠকে সিরিয়ার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানী এবং ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা সংলাপের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমেদ আল-দালাতি। অপরদিকে, ইসরায়েলের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের বিশেষ দূত এবং একটি শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল।
বিশেষ সূত্র জানায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারা সরাসরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, তবে পুরো প্রক্রিয়া তাঁর জ্ঞাতেই হয়েছে।
দীর্ঘ দিনের বৈরিতা
সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই উত্তপ্ত ও বৈরিতাপূর্ণ। ১৯৭৪ সালের বিচ্ছিন্নতা চুক্তির পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কখনোই আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ইসরায়েল সিরিয়ার অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক হামলা চালিয়েছে, যার বেশিরভাগই ছিল ইরান ও হিজবুল্লাহ সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে।
তবে বাশার আল-আসাদের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা আঞ্চলিক শান্তি ও কূটনৈতিক ভারসাম্য চায়।
ইসরায়েলের কৌশল ও আজারবাইজানের ভূমিকা
আজারবাইজান একদিকে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র, অন্যদিকে ভৌগোলিকভাবে ইরানের প্রতিবেশী — যার কারণে এই দেশটি এখন কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করছেন, ইরানকে রাজনৈতিক বার্তা দিতেই ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে আজারবাইজানকে আলোচনার ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছে।
বাকু এর আগেও ইসরায়েল-তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা সংবেদনশীল আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে। ফলে, এই বৈঠক অনেকের কাছে বিস্ময়ের কিছু নয়।
আলোচনায় কী কী বিষয় উঠে এসেছে?
বৈঠকে যেসব স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ইসরায়েল-সিরিয়ার সম্ভাব্য নিরাপত্তা চুক্তি
- ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব
- হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার ও তার ভবিষ্যৎ
- লেবাননের ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম
- গাজা থেকে বিতাড়িত ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন
- দামেস্কে ইসরায়েলের সমন্বয় অফিস খোলার সম্ভাবনা
এছাড়াও আলোচনায় উঠে এসেছে, উভয় পক্ষ ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা একটি নতুন যুগের সূচনার ইঙ্গিত দিতে পারে। অতীতে যখন সৌদি আরব-ইসরায়েল গোপন আলোচনায় বসেছিল, কিছু মাস পরেই তা ফলপ্রসূ হয়ে প্রকাশ্যে আসে। একই সম্ভাবনা এখন সিরিয়া ও ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। ইসরায়েল কিংবা সিরিয়া — কেউই প্রকাশ্যে এই বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য করেনি।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও উদ্বেগ
যদিও এটি একটি প্রাথমিক ধাপ, তবু দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ ভুলে এক টেবিলে বসা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ভর করছে ভবিষ্যতের পদক্ষেপগুলোর ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি দামেস্কে ইসরায়েলের সমন্বয় অফিস খোলার বিষয়টি সত্যি হয়, তবে এটি হবে সিরিয়া-ইসরায়েল সম্পর্কে যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা।
“এই আলোচনায় সরাসরি অংশ না নিলেও, প্রেসিডেন্ট আল-শারার সম্মতি ছাড়া এমন বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই”—সিরিয়ার এক ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক।
সারসংক্ষেপ
সিরিয়া ও ইসরায়েলের এই গোপন বৈঠক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে এটি একবারে ফলপ্রসূ হবে কিনা, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময়।
তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে — এই বৈঠকের পরে কি নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করছে মধ্যপ্রাচ্য?
এম আর এম – ০৩২১, Signalbd.com