কক্সবাজারের উখিয়ায় এক মাদকাসক্ত পিতা নিজের চার বছরের কন্যাকে নেশার টাকায় পিটিয়ে হত্যা করেছে। হত্যার পর শিশুটির মরদেহ পাশের খালে ফেলে দেয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী কোনারপাড়া এলাকায়। পুলিশ অভিযুক্ত বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে।
কাকে হত্যা করলেন মাদকাসক্ত বাবা?
নিহত শিশুটির নাম কানিজ ফাতেমা জ্যোতি। সে মনখালী এলাকার আমান উল্লাহ ও জোসনা আক্তারের কন্যা। চার বছরের ছোট্ট এই মেয়েটি তার বাবার নেশার টাকার জন্য নির্মমভাবে মারা গেছে।
ঘটনার পেছনের মর্মান্তিক কারণ
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন জানান, আমান উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত। নিয়মিত মাদক সেবনের জন্য সে টাকার জন্য স্ত্রী-সন্তানকে চাপ দিত। টাকা না পেলে স্ত্রী জোসনার সঙ্গে ঝগড়া করতেন। হত্যাকাণ্ডের দিনও রাতে একই কারণে তাদের মধ্যে তর্ক হয়। একপর্যায়ে মারধরের চেষ্টা করলে স্ত্রী ভয়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
অসহায় শিশুটি হয়ে পড়ল বাবার রোষের শিকার
স্ত্রীকে না পেয়ে ক্রুদ্ধ আমান উল্লাহ তার চার বছরের মেয়ে কানিজ ফাতেমাকে জুতির আঘাত দিয়ে হত্যা করে। এই নির্দয় আঘাতেই ঘটনাস্থলেই শিশুটির মৃত্যু ঘটে। এরপর লাশটি পাশের খালে ফেলে রেখে পালানোর চেষ্টা করে সে।
পুলিশে খবর পেয়ে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
স্থানীয়রা যখন শিশুটির লাশ খাল থেকে উদ্ধার করে এবং পুলিশকে খবর দেয়, তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং আমান উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে। নিহত শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মাদকাসক্তি: পারিবারিক সংঘাতের অন্যতম কারণ
বাংলাদেশে মাদকাসক্তি একটি জটিল সামাজিক সমস্যা। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার পরিবারগুলোতে মাদকাসক্তির প্রভাব পরিবার ও সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। এধরনের নৃশংস ঘটনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটছে।
উখিয়ার মতো সীমান্তবর্তী ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাদক প্রবেশ এবং সেবন বেড়ে যাওয়ার ফলে পারিবারিক সহিংসতা, অর্থনৈতিক সংকট এবং সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। এই ঘটনার মধ্যেও স্পষ্ট যে, মাদকাসক্তির কারণে টাকার অভাবে পরিবারের সর্বনিম্ন সদস্যরাও রক্ষা পাচ্ছে না।
উখিয়ায় মাদক ও সহিংসতার প্রেক্ষাপট
উখিয়া কক্সবাজার জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এখানে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের পাশাপাশি মাদক প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সামাজিক সমস্যা বাড়ছে। বিশেষ করে মাদকাসক্ত পিতামাতার দ্বারা শিশু নির্যাতন ও হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনাগুলো উদ্বেগজনক।
এছাড়া, মাদক সেবন থেকে সৃষ্ট অর্থ সংকট পরিবারের অস্থিরতা ও বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক সময় নেশার টাকার জন্য পিতামাতারা বাচ্চাদের প্রতি অবিচার করে থাকেন। এই ঘটনার মধ্যেও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সামাজিক প্রতিরোধ ও করণীয়
মাদকাসক্তি ও পারিবারিক সহিংসতা রোধে সরকার, সমাজ, পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের একযোগে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি। মাদকবিরোধী অভিযানকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা দরকার।
শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সমাজকে অবহিত করতে হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্বেগজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উখিয়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড সমাজের জন্য একটি রক্তক্ষরণীয় সতর্কবার্তা। এই ঘটনার মাধ্যমে মাদকাসক্তি ও পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে উচিত আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করা। শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় বিশেষ নজর দিতে হবে।
উখিয়ার মনখালী কোনারপাড়ায় চার বছরের শিশুর নির্মম হত্যা শুধু একটি মর্মান্তিক ঘটনা নয়, এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক সমস্যার নিদর্শন। মাদকাসক্তি থেকে উদ্ভূত পারিবারিক অশান্তি ও সহিংসতা যেন আরও কোন শিশু ও পরিবারে পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য সমগ্র সমাজের একযোগে সচেতন হওয়া জরুরি।
আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো মাদক মুক্ত সমাজ গঠন করা এবং শিশুদের নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করা।



