বিশ্ব

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সৌদি আরবে ২০ হাজারের অধিক প্রবাসী গ্রেপ্তার

Advertisement

সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাস ও শ্রম আইন ভঙ্গের অভিযোগে গত এক সপ্তাহে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব প্রবাসীদের বিরুদ্ধে আবাসিক আইন, শ্রম আইন ও সীমান্ত নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর ফলে দেশজুড়ে আবারও প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

গ্রেপ্তারের বিস্তারিত তথ্য

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত সাত দিনে মোট ২০ হাজার ৩১৯ জন প্রবাসীকে আটক করা হয়েছে।

  • আবাসিক আইন ভঙ্গের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছে ১২ হাজার ৮৯১ জন।
  • অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় ধরা পড়েছে ৩ হাজার ৮৮৮ জন।
  • শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হয়েছে আরও ৩ হাজার ৫৪০ জন।
    এছাড়া অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়েছে ১ হাজার ২৩৮ জন বিদেশি নাগরিক।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্ত পার হওয়ার সময় আটককৃতদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ইথিওপীয়, ৪৯ শতাংশ ইয়েমেনি এবং বাকিরা অন্য দেশের নাগরিক।

সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান

সৌদি সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন এবং অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এদের অনেকেই পরে শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে অবৈধ কাজে যুক্ত হয়, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। গত এক সপ্তাহে দেশটির বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চল থেকে আরও ২২ জনকে আটক করা হয়েছে, যারা সৌদি আরব থেকে অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশের চেষ্টা করছিল।

কঠোর শাস্তির বিধান

সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যে কেউ অবৈধ প্রবেশকারীদের আশ্রয়, পরিবহন বা চাকরি দেবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেখানে বলা হয়েছে, অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা গুণতে হবে। এছাড়া অপরাধে ব্যবহৃত যানবাহন ও সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সৌদি আরব বহু বছর ধরেই অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির পর থেকে এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। ২০২৪ সালেও একাধিকবার বড় আকারে অভিযান চালানো হয়েছিল, যেখানে হাজার হাজার প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এবারের সংখ্যা আবারও বাড়তে শুরু করেছে, যা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রভাবিত হচ্ছে কারা

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশি হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনো জাতিগত বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। বাংলাদেশি প্রবাসী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, প্রায়শই বৈধ কাগজপত্র না থাকার কারণে অনেক বাংলাদেশি কর্মীও এসব অভিযানে বিপাকে পড়েন। ফলে পরিবারগুলো অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ পথে কর্মসংস্থানের চেষ্টা করলে শুধু কর্মীরা নয়, তাদের পরিবারও ঝুঁকির মুখে পড়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

শ্রম বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌদি আরবে ক্রমাগত আইন কঠোর হওয়ার কারণে এখন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সেখানে অবস্থান করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই যেসব দেশ থেকে প্রবাসীরা সৌদি আরবে যাচ্ছেন, তাদের উচিত আইন মেনে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

একজন অভিজ্ঞ প্রবাসী নেতা বলেন, “সৌদি কর্তৃপক্ষ এখন শূন্য সহনশীল নীতি নিচ্ছে। বৈধ ভিসা বা কাগজপত্র ছাড়া কেউ টিকে থাকতে পারবে না। বাংলাদেশি কর্মীদের উচিত এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা।”

পরিশেষে

গত এক সপ্তাহে সৌদি আরবে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা আবারও প্রমাণ করছে যে দেশটি অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন শ্রম রপ্তানিকারক দেশের প্রবাসীদের ওপর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশি কর্মীরা কি আরও নিরাপদ ও বৈধ উপায়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারবে?

এম আর এম – ১০৯৮, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button