
চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিপুর সাহাপাড়া এলাকায় স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, খোসালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলেমা খাতুন কিছু পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। ঘুষ না দেওয়ায় বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ কাজের ফলে তারা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগের বিস্তারিত
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খোসালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে শহরবানু বেগমের দরজা সংলগ্ন এলাকায় সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়। পরিবারটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রধান শিক্ষক মোসলেমা খাতুন ঘুষ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় তারা অভিযোগ করেছেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।
মোসা. শহরবানু বেগম বলেন, “আমি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিদ্যালয়ের কাজে সাহায্য করি। কিন্তু এবার আমার দরজা ঘিরেই সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসনের কাছে বহুবার আবেদন করলেও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি মানছেন না।”
স্থানীয়রা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এবং ঘটনাটির যথাযথ তদন্ত দাবি করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এলজিইডি’র প্রকল্প অনুযায়ী কাজ চলছে। তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ঘুষ চাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটার কথা নয়। তবে বিষয়টি সরেজমিনে দেখার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। স্কুল প্রশাসন ও স্থানীয়দের বক্তব্যের মধ্যে কোনো মিল না থাকায় তদারকি করা হচ্ছে।
এ ধরনের ঘটনা চাঁপাইনবাবগঞ্জে নতুন নয়। পূর্বেও স্কুলের উন্নয়ন প্রকল্পের সময় স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিরোধ ও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে জায়গার স্বার্থে বা নির্মাণ কাজের কারণে স্থানীয়দের চলাচলে প্রভাব পড়া সাধারণ দেখা যায়।
খোসালডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় এই প্রথমবার নয় যে স্থানীয়দের চলাচলের উপর বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এবার অভিযোগ ঘুষ দাবির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
শহরবানুর পরিবারসহ আশেপাশের কয়েকটি পরিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ঘুষ না দেওয়ায় তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও চলাচলের অধিকার সীমিত হয়েছে।
শহরবানু বেগম বলেন, “আমরা আমাদের ঘরের নিরাপত্তা ও চলাচলের অধিকার চাই। প্রশাসন যেন দ্রুত এই বিষয়টি সমাধান করে।” স্থানীয়দের দাবি, শিক্ষার্থীদের সুবিধা বজায় রেখে এলাকায় চলাচলের সমস্যা সমাধান করা হোক।
বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক মতামত
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলাকালীন স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তাঁদের চলাচলের ব্যবস্থা রাখা খুবই জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনের দায়িত্ব হলো বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প ও স্থানীয় অধিকার দুটোই সমন্বিতভাবে নিশ্চিত করা।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যদি ঘুষ সংক্রান্ত অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
স্থানীয়রা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত তদন্ত শেষ করে, স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সঙ্গে চলাচলের বাধা দূর করবে। এছাড়া, তারা পুনরায় এমন পরিস্থিতি না হওয়ার জন্য প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
চূড়ান্তভাবে, এই ঘটনার প্রভাব স্থানীয় সম্প্রদায় এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উভয়ের উপর পড়তে পারে। তাই দায়িত্বশীল আচরণ এবং স্বচ্ছ তদন্ত প্রয়োজন।
শেষাংশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিপুর সাহাপাড়া এলাকায় স্কুলের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ সংক্রান্ত এই অভিযোগ স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ঘুষ দাবি এবং চলাচলের বাধা দূর করা না হলে বিষয়টি শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক শান্তির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসন কীভাবে দ্রুত পরিস্থিতি সমাধান করবে, তা এখন সকলের নজরদারির বিষয়।
এম আর এম – ০৯১৪, Signalbd.com