কর্মসংস্থান

বিসিএসসহ সরকারি চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য বিধিমালা চূড়ান্ত পিএসসির

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সম্প্রতি সরকারি চাকরির জন্য প্রার্থীদের প্রাক্-পরিচয় যাচাইয়ের নতুন বিধিমালা ২০২৫ খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই নতুন বিধিমালা বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরও সুনির্দিষ্ট ও পরীক্ষার্থী বান্ধব করে তুলতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পিএসসি কর্মকর্তাদের মতে, এই বিধিমালার মাধ্যমে প্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ হবে এবং বৈষম্য দূর করতে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

নতুন বিধিমালার মূল বিষয়বস্তু

পিএসসির এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নতুন বিধিমালাতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন কোন পরিস্থিতিতে একজন প্রার্থীকে সরকারি চাকরির জন্য অনুপযুক্ত ঘোষণা করা যাবে। এর ফলে চাকরির প্রার্থীরা এখন তাদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার কারণ জানতে পারবেন।

এছাড়াও, কোনো প্রার্থীকে যদি অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয়, তবে তার পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখার প্রস্তাবও বিধিমালায় রাখা হয়েছে। প্রার্থী চাইলে আবেদন করতে পারবেন এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ চাইলে পুনঃ তদন্তের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হতে পারে। এই বিধিমালা সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আগামীতে এই বিধির অধীনে বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হবে।

প্রার্থীদের জন্য সুবিধা

পিএসসি এর চূড়ান্ত বিধিমালা অনুযায়ী, পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য আরো স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। পূর্বে অনেক প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতেন, কিন্তু এই নতুন বিধি তাদের জন্য একটি সহজ, সুষ্ঠু ও আধুনিক পদ্ধতির সুযোগ প্রদান করবে। এমনকি প্রার্থীরা এখন তাদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার কারণ জানতে পারবেন এবং সংশোধনের সুযোগও পাবেন।

প্রার্থী বাতিলের প্রক্রিয়া

নতুন বিধিমালায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, প্রার্থী বাতিল হওয়ার পর কেন তিনি অনুপযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, সেই বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে। প্রার্থী পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করলে তার প্রার্থিতা পুনরায় যাচাই করা হবে। এজন্য পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে কোনো প্রার্থীর ক্ষেত্রে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়।

এছাড়াও, এই বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীকে অনুপযুক্ত ঘোষণা করার পর তার জন্য পুনঃবিচারের সুযোগ রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা পুনরায় পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ পাবেন, যা আগের চেয়ে অধিক নমনীয়তা প্রদান করবে।

নতুন বিধিমালার সুবিধা

এই নতুন বিধিমালা পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়াকে আরো সহজ ও আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করেছে, যা পরীক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় সুবিধা। পূর্বে যেখানে প্রার্থীরা পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতেন, এই বিধিমালা তাদের জন্য স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এখনকার বিধিমালায় প্রার্থীরা কেবল তাদের প্রার্থী হওয়া নয়, বরং তাদের যোগ্যতা ও বৈধতা সম্পর্কে জানতেও সক্ষম হবেন।

নন-ক্যাডার বিধিমালার সংশোধন

এছাড়াও পিএসসি বৈঠকে নন-ক্যাডার বিধিমালা ২০২৩ সংশোধনের ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই বিধিমালায় সংশোধন করা হলে নন-ক্যাডার চাকরির জন্যও একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া তৈরি হবে, যা প্রার্থীদের জন্য আরও সুবিধাজনক হবে।

রেলওয়ে পরীক্ষার নতুন ব্যবস্থা

পিএসসির এক বৈঠকে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদের পরীক্ষার নতুন পদ্ধতি নিয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীতে এই পরীক্ষাটি তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে, যথা—প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক পরীক্ষা। এই ধাপগুলো পরীক্ষার্থীদের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবে, যার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচন করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ

এই বিধিমালা এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং সেখানে সার্বিক বিবেচনার পর এটি চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পাবে। যদি মন্ত্রণালয় এটি অনুমোদন করে, তবে এটি দ্রুত কার্যকর হবে এবং সারা দেশে বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরির জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সহজতর হবে।

উপসংহার

পিএসসি যে নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে, তা সরকারি চাকরির প্রার্থী নির্বাচনে নতুন একটি যুগের সূচনা করবে। এটি শুধু প্রার্থীদের জন্য নয়, বরং সরকারি চাকরি ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাও নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে প্রার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি ও বিরক্তি কমবে এবং অধিক সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় তারা চাকরি পাবে। সব মিলিয়ে এটি সরকারের চাকরি ব্যবস্থার একটি বড় ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button