গত দুই সপ্তাহের মধ্যে গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে চার জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন। ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সেনারা গাজায় সামরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছিলেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোর যুদ্ধ পরিস্থিতি ও মানসিক চাপের কারণে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গাজায় যুদ্ধে নিয়োজিত সেনাদের আত্মহত্যার বিস্তারিত
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’ জানায়, আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে দুজন সক্রিয় দায়িত্বে নিয়োজিত কনস্ক্রিপ্ট, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় নিযুক্ত সৈনিক। বাকি দুজন রিজার্ভ সেনা ছিলেন, যারা গাজায় কয়েক সপ্তাহ যুদ্ধের পরে সদ্য অবসর নিয়েছিলেন। এর বাইরে, ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ থেকে জানা গেছে, আরও একজন সেনা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কিন্তু বেঁচে যান এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এই আত্মহত্যাগুলো গাজা যুদ্ধের সংযোগে ঘটেছে, যেখানে গত কয়েক মাসে ফিলিস্তিনিদের ব্যাপক সংখ্যক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি সেনাদের ওপর ফিলিস্তিনি হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানসিক চাপ ও হতাশা বেড়েছে, যা আত্মহত্যার প্রবণতাকে প্রভাবিত করেছে।
ইসরায়েলের সামরিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট
গত দুই বছর ধরে গাজা অঞ্চলে চলমান সংঘর্ষে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র রূপ ধারণ করেছে। এই যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত যারা সামরিক কার্যক্রমে দীর্ঘ সময় নিযুক্ত, তাদের মধ্যে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (PTSD) এবং অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে।
হারেৎজের তথ্যমতে, চলতি বছরের ছয় মাসে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা ১৪ জন, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ২১ জন, যা ২০১১ সালের পর সবচেয়ে বেশি।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এই আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়টি ‘অসহনীয়’ এবং ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘এই যুদ্ধ শুধু প্রাণই নষ্ট করছে না, মানুষের মানসিকতা এবং আত্মাকেও বিধ্বস্ত করছে।’
সেনাবাহিনীর ভেতরে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থাগুলো মনে করছে, আত্মহত্যার প্রকৃত সংখ্যা সরকারি পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হচ্ছে না। কারণ অনেক আত্মহত্যার ঘটনা সেনাবাহিনীর নিয়মিত ডাটাবেসে অন্তর্ভুক্ত হয় না, বিশেষত রিজার্ভ সেনাদের ক্ষেত্রে। ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিসংখ্যান ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি পক্ষ থেকে অন্তত ৮৯৩ সেনা নিহত হয়েছেন এবং আনুমানিক ১৯ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এই যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা প্রায় ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১৭ হাজার শিশু রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এই সংঘর্ষে যুদ্ধে নিযুক্ত সেনাদের মানসিক চাপ ও হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় আত্মহত্যার হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে অতিরিক্ত সহিংসতা প্রত্যক্ষ করা, মানসিক অবসাদ এবং পরবর্তীতে প্রাপ্ত সাহায্যের অভাব আত্মহত্যার কারণ হিসেবে কাজ করছে। এছাড়াও, যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সামরিক বাহিনীর কার্যক্ষমতা ও সৈনিকদের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার এই বৃদ্ধি মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির প্রতিফলন। সামরিক কর্তৃপক্ষ ও সরকারের পক্ষ থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধের প্রভাবে সৈনিকদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা রোধে প্রয়োজন নিয়মিত মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, মনোবিদের সহায়তা এবং মানসিক চাপ কমানোর কার্যক্রম। অন্যথায় সামরিক বাহিনীর কার্যক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা দেশের নিরাপত্তা ও সামরিক প্রস্তুতির জন্য গুরুতর হুমকি।
এম আর এম – ০৩৯৫, Signalbd.com



