
২০২৭ সালের ২ আগস্ট ঘটতে যাচ্ছে শতাব্দীর অন্যতম বিরল ও দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী এই ঘটনা দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশে দৃশ্যমান হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি অনন্য ঘটনা হয়ে থাকবে।
সূর্যগ্রহণটি কতটা দীর্ঘ ও কোথায় দেখা যাবে?
২০২৭ সালের এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণটি চলবে ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড, যা একবিংশ শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী সূর্যগ্রহণগুলোর অন্যতম। এই গ্রহণটি মূলত দক্ষিণ ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অঞ্চলে পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হবে। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিশর, সুদান, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সোমালিয়ার আকাশে এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে স্থানীয় জনগণ। তবে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অংশ থেকে এটি দৃশ্যমান হবে না।
সূর্যগ্রহণ কীভাবে ঘটে?
সূর্যগ্রহণ ঘটে তখন, যখন চাঁদ সরাসরি পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চলে আসে এবং সূর্যের আলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে আটকে দেয়। এই ঘটনাটি সাধারণত অমাবস্যার সময় ঘটে, যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে অবস্থান নেয়। তবে সূর্যগ্রহণের জন্য বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়ের প্রয়োজন হয়, যা একে অত্যন্ত বিরল করে তোলে।
পূর্বে এমন দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ কবে ঘটেছিল?
এর আগে ২০০৯ সালের জুলাই মাসে এশিয়াতে একটি দীর্ঘ সূর্যগ্রহণ হয়েছিল, যা প্রায় ৬ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল। তবে সেটির কিছু অংশ ছিল সমুদ্রের ওপর দিয়ে দৃশ্যমান। এবার ২০২৭ সালের সূর্যগ্রহণটি ভূমি থেকে এত দীর্ঘ সময় ধরে দেখা যাবে, যা ১৯৯১ সাল থেকে ২১১৪ সালের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
‘টোটালিটি’ বা পূর্ণগ্রাস মুহূর্ত কী?
পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সম্পূর্ণভাবে সূর্যকে ঢেকে ফেলে। এই মুহূর্তকে বলা হয় ‘টোটালিটি’। তখন দিনের আকাশে অন্ধকার নেমে আসে, তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পায় এবং অনেক সময় পাখিরা দিনকে রাত মনে করে আবাসে ফিরে যায়। এই মুহূর্তের সময়কালই মূলত সূর্যগ্রহণের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করে। ২০২৭ সালের গ্রহণে এই টোটালিটি থাকবে প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড।
এই সূর্যগ্রহণ কেন এত বিশেষ?
এই সূর্যগ্রহণ কয়েকটি কারণে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে:
- সময়ের দিক থেকে এটি শতাব্দীর দীর্ঘতম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
- এটি মূলত ভূমি থেকে দেখা যাবে, সমুদ্রের উপর নয়, ফলে সাধারণ মানুষ সহজেই এটি প্রত্যক্ষ করতে পারবে।
- প্রায় ৮৯ মিলিয়ন মানুষ এই গ্রহণ সরাসরি দেখতে পারবে।
- বিশেষজ্ঞদের মতে, সূর্য ও চাঁদের আপাত আকারের মেলবন্ধনের কারণেই এই দীর্ঘ সময়ব্যাপী টোটালিটি সম্ভব হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বিশ্লেষণ
রয়েল মিউজিয়ামস গ্রিনউইচের সিনিয়র জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্রেগ ব্রাউন এই গ্রহণকে “অসাধারণ এবং বিরল” বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, চাঁদ ও সূর্যের কক্ষপথের দূরত্ব সামান্য পরিবর্তনের কারণেই চাঁদ বড় দেখায় এবং সূর্যকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে ফেলে — যার ফলেই দীর্ঘ সময় ধরে টোটালিটি ঘটে। তিনি বলেন, “এ ধরনের গ্রহণ বিরল এবং চাক্ষুষভাবে খুবই প্রভাববিস্তারী হয়। এটি বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।”
সূর্যগ্রহণ দেখার প্রস্তুতি ও সাবধানতা
যারা এই সূর্যগ্রহণ দেখতে আগ্রহী, তাদের অবশ্যই নিরাপদ উপায়ে দেখতে হবে। খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকানো বিপজ্জনক এবং চোখের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এজন্য বিশেষ সোলার ভিউয়ার বা সূর্যগ্রহণ চশমা ব্যবহার করা আবশ্যক।
অনেক জ্যোতির্বিদ এবং পর্যবেক্ষক দল ইতিমধ্যেই উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশে পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। একাধিক আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এই গ্রহণের উপর সরাসরি গবেষণা চালাবে বলে জানা গেছে।
সারসংক্ষেপ
আগামী ২০২৭ সালের ২ আগস্ট পৃথিবী সাক্ষী হতে যাচ্ছে ১২৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী একটি পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের। প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড স্থায়ী এ মহাজাগতিক ঘটনা পৃথিবীর বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দিনের আলোকে ঢেকে ফেলবে ঘন অন্ধকারে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি বিগত শতাব্দীর মধ্যে এক স্মরণীয় জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ হতে যাচ্ছে।
২০২৭ সালের ২ আগস্টের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা হয়ে থাকবে। এই মহাজাগতিক মুহূর্ত শুধুমাত্র সৌন্দর্য্যের দিক থেকেই নয়, গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের দিক থেকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন দেখার বিষয়, মানুষ এই বিরল সুযোগ কীভাবে কাজে লাগায় এবং ভবিষ্যৎ সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণে এটি কতটা তথ্য যোগ করবে।
এম আর এম – ০৪৮৯ , Signalbd.com