বাংলাদেশ

ডিজিএফআই’র সাবেক ডিজি হামিদুল হকের ৪০ কোটি টাকা অবরুদ্ধ

Advertisement

বাংলাদেশ সামরিক গোয়েন্দার দুর্নীতির অভিযোগে মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত, দুদক-এর অনুসন্ধান চলছে

ঢাকা, ৭ জুলাই ২০২৫ – বাংলাদেশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই)-এর সাবেক মহাপরিচালক ও ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টের সাবেক জিওসি, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর তাঁর ব্যাংকে থাকা ৪০ কোটি টাকার উপর অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।

এই নির্দেশনা দুদক-এর (দুর্নীতি দমন কমিশন) আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি করা হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ জানান, মামলাটি দুদকের পক্ষ থেকে গত কয়েক মাস ধরে তদন্তাধীন ছিল এবং অভিযোগের প্রমাণের ভিত্তিতে আজকের এই নির্দেশনাটি আদালত থেকে এসেছে।

মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত

দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নওশাদ আলী আদালতে জমা দেওয়া আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি তহবিল থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন যা তাঁদের আয় হিসেবের বাইরে।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিনি তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তরের চেষ্টা করছিলেন, যা বন্ধ করতে এই অবরুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ডিজিএফআই ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা সম্পর্কে

ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) হলো বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা যা দেশের নিরাপত্তা ও সামরিক গোয়েন্দা তত্ত্বাবধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিজিএফআই প্রধান সামরিক গোয়েন্দাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং দেশের সামরিক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে থাকে।

মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, যিনি এর সাবেক মহাপরিচালক ও ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টের সাবেক জিওসি ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ দেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার জন্য এক বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান ও সরকারের দৃঢ় মনোভাব

বাংলাদেশ সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব গ্রহণ করা হয়েছে।

দুদক বিভিন্ন সময়ে অনেক বড় দুর্নীতির মামলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সম্পদ অবরুদ্ধ এবং গ্রেফতার করার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বচ্ছতা ও নৈতিকতা বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে সরকার দাবি করে থাকে।

অর্থ অবরুদ্ধের প্রক্রিয়া ও এর প্রভাব

অবস্তুত, ৪০ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা মানে ওই অর্থ কখনোই উক্ত ব্যক্তির ব্যবহার বা স্থানান্তর সম্ভব নয় যতক্ষণ না আদালত বা তদন্ত সংস্থা এর বিরুদ্ধে কোনও সিদ্ধান্ত দেয়। এই পদক্ষেপ দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য কমাতে এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এই অর্থ অবরুদ্ধের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থা নিশ্চিত করতে চায় যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি আর্থিক লেনদেন বন্ধ রাখবেন এবং অবৈধ সম্পদের উৎস সম্পর্কে তদন্তের জন্য সময় পাবে।

সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় দুর্নীতি: একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন

বাংলাদেশে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সাধারণত দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের খবর সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের নিরাপত্তা বাহিনী দুর্নীতিমুক্ত হলে সারা দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কার্যক্রমও অনেক বেশি কার্যকর হবে। তাই সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নির্মূলে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া অতীব জরুরি।

সাম্প্রতিক অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও দুদকের অভিযান

২০২৫ সালে দুদক বেশ কয়েকটি বড় দুর্নীতি মামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীও রয়েছে। মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের এই মামলা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষেত্রে প্রথম নয়।

সরকারের এই ধরণের উদ্যোগ দেশের করদাতাদের আস্থা অর্জন এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে এ ধরনের পদক্ষেপগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হকের বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের এই ঘটনা বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকার এবং দুদকের দৃঢ় অবস্থান প্রমাণ করে। এটি দেশের প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযানের একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়টি সর্বদা কঠোর নজরে রাখতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button