সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ১০,২১৯ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘদিন পর এটি একটি বড় পরিসরের নিয়োগ প্রক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যা শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং পর্যাপ্ত জনবল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রস্তুতি সম্পন্ন
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার দেশের সকল জাতীয় পত্রিকায় এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে সকল প্রার্থীরা সরাসরি আবেদন করতে পারবেন।”
প্রথম ধাপে কোন অঞ্চলে নিয়োগ
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে শূন্যপদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পরবর্তী ধাপে প্রকাশিত হবে।
নিয়োগের পেছনের প্রক্রিয়া
চলতি বছরের ২৮ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ প্রজ্ঞাপন জারি করে। বিধিমালার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সহকারী শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য স্পষ্ট ও কার্যকর নিয়মকানুন স্থাপন করা।
৩১ আগস্ট ওই বছরের আট সদস্যের ‘কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি’ গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। সদস্যসচিব হিসেবে অধিদপ্তরের (পলিসি ও অপারেশন) পরিচালক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এছাড়াও কমিটিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এবং সরকারি কর্ম কমিশনের প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তি বিলম্বের কারণ
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রথমে কিছু ত্রুটি থাকায় বিলম্বিত হয়। পরবর্তীতে সংশোধন শেষে ২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে নতুনভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫ প্রকাশিত হয়।
নতুন বিধিমালার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন
নতুন বিধিমালায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হলো:
- পূর্বের ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্তত’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞান বিষয় শিক্ষার্থীরা সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পাবেন।
- প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে করা হবে।
- পদোন্নতির জন্য প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে অন্তত ১২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা, মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরির স্থায়ীকরণ সম্পন্ন করতে হবে।
- সরাসরি নিয়োগে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় পদের জন্য প্রার্থীর স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ বাধ্যতামূলক।
- শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ফল গ্রহণযোগ্য নয়।
- উভয় পদের সরাসরি নিয়োগের জন্য বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব ও জনবল বৃদ্ধি
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা হলো জাতীয় শিক্ষানীতি ও মানসম্মত মানবসম্পদ উন্নয়নের ভিত্তি। শিক্ষকের সংখ্যা ও মান নির্ভরশীল শিক্ষার মানের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঘাটতি থাকায় শিক্ষার্থীদের মৌলিক জ্ঞান অর্জনে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শিক্ষাব্যবস্থায় এক বড় ধাক্কা হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ২,৫০,০০০, যেখানে সহকারী শিক্ষক পদে শূন্যপদের সংখ্যা অনেক। তাই নতুন এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিদ্যালয়গুলোর জনবল ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য প্রভাব
নতুন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উন্নত ও যোগ্য শিক্ষক পাবে। বিশেষ করে বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান বেড়ে যাবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে, যা শিক্ষার পরিবেশকে আরও উন্নত করবে।
আবেদন প্রক্রিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। প্রার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো:
- প্রার্থীর বয়স ৩২ বছরের বেশি হতে পারবে না।
- স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি বাধ্যতামূলক।
- শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয়।
- পদোন্নতির জন্য সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
- প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় পদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত যোগ্যতা ও শিক্ষাগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
সারসংক্ষেপ
এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শুধুমাত্র শিক্ষক নয়, পুরো প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঘাটতি পূরণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
MAH – 13641 I Signalbd.com



