
সম্প্রতি ইরান ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের তীব্র যুদ্ধের বিষয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই সংঘর্ষে ইসরায়েলের ১৬ জনের বেশি পাইলট নিহত হয়েছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বার্তাসংস্থা মেহের নিউজ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি জানান, যুদ্ধের প্রথম কয়েক দিনে ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল দেখা গেলেও পরে পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে বদলে যায় এবং ইরান যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে নেয়।
যুদ্ধের প্রথম দিনগুলো: ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জ
মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি উল্লেখ করেছেন, যুদ্ধের শুরুতে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। “প্রথম দুই-তিন দিনের মধ্যে আমাদের কিছু দুর্বলতা ছিল। তবে চতুর্থদিন থেকে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। শেষ দিনগুলোতে আমরা পুরোপুরি আধিপত্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও স্বীকার করেছেন যে, এই সংঘর্ষে ইরানের সামরিক শক্তি কার্যকরভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ইসরায়েলের লক্ষ্য এবং ব্যর্থতা
জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েল চেয়েছিল ইরানকে রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে অস্থিতিশীল করে ফেলা। এছাড়া তারা ইরানের সামরিক শক্তি, বিশেষত পারমাণবিক সক্ষমতাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ইরান তাদের উদ্দেশ্য সফলভাবে ব্যর্থ করেছে।
তিনি বলেন, ইসরায়েলিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আক্রমণ চালানো হয়েছিল। এ সময় ইরানি সামরিক বাহিনী ইসরায়েলের কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ টার্মিনালগুলোতে আঘাত হানেন। ফলে ইসরায়েলি বাহিনীও বাধ্য হয় আত্মসমর্পণে।
ইসরায়েলের পাইলটদের ক্ষয়ক্ষতি
মেজর জেনারেল দাবি করেছেন, ইরানি অভিযানে ইসরায়েলের ১৬ জনের বেশি পাইলট নিহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ক্ষয়ক্ষতি ইসরায়েলের সামরিক শক্তির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এ ধরনের আঘাতের পর, ইসরায়েলের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, ইরানকে প্রতিহত করতে ইসরায়েলকে ৬০০ থেকে ৬৫০টি আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইল ব্যবহার করতে হয়েছে। কিন্তু তাও তাদের মিসাইলের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
যুদ্ধের সূত্রপাত: ইসরায়েলের হামলা
মেজর জেনারেল জানিয়েছেন, গত ১৩ জুন ইরানে বিনা উস্কানিতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই হামলার ফলে ইরানও পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। দুই পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ মোট ১৩ দিন পর্যন্ত চলে এবং তারপর যুদ্ধবিরতিতে দুই পক্ষ সম্মত হয়।
তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধের এই পর্যায়ে ইরান তাদের সামরিক কৌশল, গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যথাযথ ব্যবহার করেছে। ইরান এখন তাদের সামরিক শক্তি পুনর্গঠন করছে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং বিশ্লেষণ
এই সংঘর্ষের পর আন্তর্জাতিক মহলও সতর্ক হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করছেন যে, ইরানের আধিপত্যপূর্ণ বিমান ও রকেট হামলা ইসরায়েলের সামরিক কৌশলকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এছাড়া ইরান শক্তিশালী ড্রোন প্রযুক্তি এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে এই সংঘর্ষে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবিরোধী এবং সামরিক অভিযানের নকশা পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ করে, ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের মতো ঘটনা অঞ্চলীয় শক্তি ভারসাম্যের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরানের সামরিক শক্তি ও প্রস্তুতি
মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি জানিয়েছেন, ইরান যুদ্ধের শেষের দিকে তাদের সামরিক শক্তি পুনর্গঠন করছে। তারা আকাশ প্রতিরক্ষা, সামরিক কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভবিষ্যতে যে কোনও হুমকির মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধ ইরানের সামরিক কৌশল এবং আঞ্চলিক প্রভাবকে দৃঢ় করেছে। ইরান প্রতিপক্ষকে দেখিয়েছে যে, তাদের সামরিক সক্ষমতা শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রভাবশালী।
মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি এবং ইরানি সামরিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষের ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যুদ্ধের প্রথম দিকে কিছু দুর্বলতা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত ইরান তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
বিশেষ করে, ইসরায়েলের ১৬ জনের বেশি পাইলটের মৃত্যুর ঘটনা ইরানের সামরিক দক্ষতার প্রমাণ। এছাড়া ইরান তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে ভবিষ্যতের হুমকি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের এই ঘটনা কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে।
MAH – 13044 I Signalbd.com