কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ৩,৫৩৪ নিয়োগ স্থগিত
বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনস্থ বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদে ৩,৫৩৪ জনের নিয়োগ কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। এই স্থগিতাদেশের ফলে আগামী ২৯ জানুয়ারি নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ও রিট আবেদন
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে শওকত আকবরসহ ১৮ জন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ দেন।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সময়রেখা
২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর পিএসসি জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর, ইনস্ট্রাক্টর ও ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ২০২২ সালের ১৮ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং মে থেকে জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়, যেখানে ৩,৫৩৪ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। ২০২৫ সালের ২৩ জানুয়ারি তাদের যোগদানের জন্য পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের প্রমাণ
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিট আবেদনে সংযুক্ত করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২৪ বছর ধরে একটি চক্র প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত। সিআইডি এই বিষয়ে তদন্ত করছে এবং ইতোমধ্যে পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আদালতের রুল ও পরবর্তী পদক্ষেপ
হাইকোর্টের রুলে ২৩ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনগুলো কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষা সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাম্প্রতিক ঘটনা ও প্রভাব
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ধরনের ঘটনা নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান জরুরি।
সংশ্লিষ্টদের প্রতিক্রিয়া
নিয়োগ স্থগিতের বিষয়ে প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু প্রার্থী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে বলে তারা মনে করেন। অন্যদিকে, অনেক প্রার্থী এই স্থগিতাদেশে হতাশা প্রকাশ করেছেন, কারণ এটি তাদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
ভবিষ্যৎ করণীয়
প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এতে প্রার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে এবং দেশের শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থার মান উন্নত হবে।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ স্থগিতের এই ঘটনা দেশের নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো গুরুতর অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপই পারে প্রার্থীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে এবং দেশের শিক্ষা ও নিয়োগ ব্যবস্থার মান উন্নত করতে।