আঞ্চলিক

বরগুনায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি: আইসিইউ নেই, বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি

বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সদরের পাশাপাশি জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও এডিস মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ জুন পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২,২০০ জনে। প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

আইসিইউ নেই, বিপাকে রোগী ও স্বজনরা

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যা থাকলেও নেই কোনো আইসিইউ সুবিধা। ফলে গুরুতর রোগীদের জীবন বাঁচাতে সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একমাত্র আইসিইউ সুবিধাসম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্সটিও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। রোগীদের বরিশাল বা ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সে, যা রোগীর জীবনের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজওয়ানুল আলম বলেন, “আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু আইসিইউ না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীদের দ্রুত রেফার করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকে না। এটি আমাদের জন্যও মানসিক চাপে পরিণত হয়েছে।”

হাসপাতালগুলোতে শয্যাসংকট, চিকিৎসা চলছে মেঝেতে

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুপ্রিয়া হাওলাদার জানান, “হাসপাতালে হাঁটার জায়গা নেই। চারগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”
অনেক রোগী মেঝেতে, বারান্দায় বা নার্সদের ডেস্কের পেছনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীর স্বজনরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন, কখন কী হয় সেই শঙ্কায়।

মৃত্যু বাড়ছে সরকারি-বেসরকারি উভয় হিসাবে

সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত বরগুনা জেলায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ১১ ছাড়িয়েছে। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, বরগুনা জেলার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জনবল সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা

ডেঙ্গু মোকাবিলায় বরগুনায় অতিরিক্ত ১২ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স পদায়ন করা হলেও তাদের মধ্যে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক ও ৫ জন নার্স দায়িত্বে যোগ দিয়েছেন। বাকিরা এখনও কাজে যোগ দেননি। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, “এবারের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আইসিইউ না থাকা প্রশাসনিক ব্যর্থতা। দ্রুত আইসিইউ স্থাপন এবং আইসিইউ সুবিধাযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স সচল করতে হবে।”

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও জনসচেতনতার অভাব

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক রোগী রয়েছেন যারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হতে পারতেন। আতঙ্কিত হয়ে সবাই হাসপাতালে ছুটে আসছেন, এতে করে হাসপাতালে চাপ বাড়ছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাজকিয়া সিদ্দিকাহ বলেন, “রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনসচেতনতা না বাড়ালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”

আইসিইউ স্থাপনে উদ্যোগ

বরগুনার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ জানিয়েছেন, আইসিইউ স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

ভবিষ্যতের করণীয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নগরীতে মশক নিধন অভিযান জোরদার করা, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, জনসচেতনতা বাড়ানো এবং জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ সুবিধা চালু করতে হবে। নইলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে এবং মৃত্যু সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এম আর এম – ০০০৩ , Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button