বাংলাদেশ

ফাইভ-জি চালু করলো রবি ও গ্রামীণফোন

বাংলাদেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির নতুন যুগের সূচনা হলো। দেশের দুই শীর্ষ মোবাইল অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেড ও গ্রামীণফোন একই দিনে বাণিজ্যিকভাবে ফাইভ-জি সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা এখন বাস্তবে রূপ নিলো।

রবি ও গ্রামীণফোনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীতে নিজস্ব কার্যালয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফাইভ-জি সেবা চালু করে রবি। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্মার্ট নেটওয়ার্কের যুগে নিতে এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

রবির ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে গ্রামীণফোনও তাদের ফাইভ-জি সেবা চালুর ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির সিইও ইয়াসির আজমান অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিতে এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

কোথায় কোথায় ফাইভ-জি সেবা পাওয়া যাচ্ছে

রবি জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ঢাকার ফকিরাপুল, শাহবাগ, মগবাজার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফাইভ-জি সেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের খুলশী ও সিলেটের সাগরদিঘীরপাড় এলাকাতেও এই সেবা চালু আছে। ধাপে ধাপে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এটি বিস্তৃত করা হবে।

গ্রামীণফোনও জানিয়েছে, প্রথম ধাপে তারা ঢাকার কিছু এলাকা ও চট্টগ্রামে সেবা চালু করেছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে ফাইভ-জি সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

ফাইভ-জির পেছনের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। বিটিআরসি ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভ-জি সেবা চালু করেছিল। তখন রাজধানীর কিছু এলাকায় সীমিত আকারে পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু হয়। তবে এবারই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে গ্রাহকদের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হলো।

বিশ্বের অনেক দেশ ইতিমধ্যেই ফাইভ-জি ব্যবহার করছে। প্রতিবেশী ভারত ২০২২ সালে এ সেবা চালু করে। বাংলাদেশ কিছুটা দেরিতে হলেও এখন সেই কাতারেই আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিল।

গ্রাহকদের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব

ফাইভ-জি প্রযুক্তি মূলত অতিদ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে ভিডিও স্ট্রিমিং, অনলাইন গেমিং, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিংবা আইওটি ডিভাইস ব্যবহারে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও শিল্পখাতেও ফাইভ-জি বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে।

তবে গ্রাহকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হলো — ফাইভ-জি ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত স্মার্টফোন বা ডিভাইস থাকা প্রয়োজন। অনেক ব্যবহারকারীর কাছে এখনো ফাইভ-জি সাপোর্টেড ডিভাইস নেই।

ডিভাইস ও খরচের চ্যালেঞ্জ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র প্রযুক্তি চালু করলেই হবে না, বরং গ্রাহকদের জন্য এটি সহজলভ্য করতে হবে। এজন্য তিনি নির্মাতাদের আরও সাশ্রয়ী মূল্যে ফাইভ-জি সাপোর্টেড ডিভাইস বাজারজাত করার আহ্বান জানান।

এছাড়া গ্রাহকদের মনে খরচ নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফাইভ-জি ডেটা প্যাকেজ কতটা সাশ্রয়ী হবে, তা নিয়েই এখন আলোচনা শুরু হয়েছে। অপারেটরগুলো জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু গ্রাহককে সেবা দেওয়া হবে। পরে বাণিজ্যিকভাবে প্যাকেজ চালু করা হবে।

বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য

টেলিযোগাযোগ খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ফাইভ-জি চালু হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এটি কতটা সফল হবে তা নির্ভর করবে অপারেটরদের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গ্রাহকদের ডিভাইস ব্যবহারের ওপর।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “ফাইভ-জি শুধু দ্রুতগতির ইন্টারনেট নয়, বরং পুরো ডিজিটাল ইকোনমিকে পরিবর্তন করবে। তবে গ্রাহকের হাতে ডিভাইস পৌঁছানো এবং সাশ্রয়ী প্যাকেজ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ।”

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ফাইভ-জি চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্মার্ট নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করলো। আগামী দিনে এর ব্যবহার আরও প্রসারিত হলে ডিজিটাল অর্থনীতি ও স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ সহজ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে ফাইভ-জির সঠিক সুবিধা পেতে হলে সরকারের নীতিগত সহায়তা, সাশ্রয়ী ডিভাইস ও শক্তিশালী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রয়োজন হবে। এখন দেখার বিষয়, অপারেটরগুলো কত দ্রুত সারাদেশে এ সেবা ছড়িয়ে দিতে পারে।

এম আর এম – ১১২৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button