বিশ্ব

মদিনা নগরীকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মুসলিমদের দ্বিতীয় পবিত্র স্থান, মসজিদে নববীর অবস্থান মদিনা নগরীকে ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই স্বীকৃতি পেতে মদিনাকে ৮০ পয়েন্টের মানদণ্ড পূরণ করতে হয়েছে, যা শহরটির পরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও নাগরিক জীবনযাত্রার মানের উজ্জ্বল প্রতিফলন।

মদিনার স্বীকৃতি লাভের অনুষ্ঠান ও গুরুত্ব

সৌদি প্রেস এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩১ জুলাই এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল জালাজেল মদিনা অঞ্চলের গভর্নর প্রিন্স সালমান বিন সুলতানকে ডব্লিউএইচও’র স্বাস্থ্যকর শহর স্বীকৃতি সনদ হস্তান্তর করেন। এই স্বীকৃতি সৌদি আরবের জন্য একটি গৌরবের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

যুবরাজ প্রিন্স সালমান বলেন, “মদিনার এই স্বীকৃতি দেশের অন্যান্য নগরকেন্দ্রের জন্য জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নেতৃত্বের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।” তিনি আরও জানান, মদিনার চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্তরে একটি ‘শীর্ষস্থানীয় উন্নয়ন মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যা সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে মদিনার বিশেষত্ব

মদিনাকে স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনে মূল কারণ হলো শহরটির সুপরিকল্পিত নাগরিক স্বাস্থ্যবিধি, পরিচ্ছন্নতা, এবং আধুনিক সুবিধাসমূহ। শহরে পর্যাপ্ত সংখ্যক পার্ক, হাঁটার উপযোগী পথ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা জনগণের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

ডব্লিউএইচও’র নিয়ম অনুযায়ী, স্বীকৃতি পেতে একটি শহরকে মোট ৮০টি নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • উন্নত এবং পরিচ্ছন্ন পার্ক ও খোলা মাঠ
  • হাঁটার পথ ও সাইক্লিং ট্র্যাকের সুসংরক্ষণ
  • প্রাথমিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নাগরিকদের সহজ অ্যাক্সেস
  • স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্কুল ও কমিউনিটি প্রোগ্রাম
  • পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ

মদিনা এই সকল দিক থেকে দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম স্বাস্থ্যকর নগর

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই স্বীকৃতি পেয়ে মদিনা মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল। এর আগে জেদ্দা শহর এই সম্মান পেয়ে ছিল। সৌদি আরবের অন্যান্য ১৪টি শহরও ডব্লিউএইচও’র ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তায়েফ, তাবুক, আদ-দিরিয়া, উনাইজা, জালাজেল, আল-মান্দাক, আল-জুমুম, রিয়াদ আল-খুবরা ও শরুরাহ।

সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ ও নগর উন্নয়ন

মদিনার এই স্বীকৃতি সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, এবং নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তোলা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং আধুনিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করাই এই পরিকল্পনার অন্যতম প্রধান অংশ।

স্বাস্থ্যকর শহরের অর্থ কি?

স্বাস্থ্যকর শহর বলতে এমন একটি নগর অর্থে যা পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উপাদান নিয়ে এমনভাবে পরিকল্পিত ও পরিচালিত হয়, যাতে সেখানে বসবাসকারীরা সুস্থ, নিরাপদ ও সুখী জীবনযাপন করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • পরিচ্ছন্নতা ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ
  • পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা
  • নিরাপদ পানীয় জল ও স্যানিটেশন
  • খোলা স্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি ও প্রকৃতির সংরক্ষণ
  • কার্যকর জনপরিবহন ব্যবস্থা
  • স্বাস্থ্য সচেতনতা ও কমিউনিটি অংশগ্রহণ

মদিনার পরিবর্তন: ইতিহাস থেকে আধুনিক শহর

মদিনা, যা ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহর হিসেবে খ্যাত, শুধু ধর্মীয় গুরুত্বের জন্য নয়, আধুনিক নগর উন্নয়নের দিক থেকেও এখন বিশ্বদরবারে পরিচিত। পুরাতন ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও আধুনিকায়নের সমন্বয়ে মদিনা তার একটি অনন্য পরিচয় গড়ে তুলেছে।

সৌদি সরকার গত কয়েক বছর ধরে মদিনাকে একটি আধুনিক স্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন:

  • নতুন পার্ক ও খোলা স্থান তৈরি
  • সড়ক ও হাঁটার পথ সংস্কার
  • স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি চিকিৎসা কেন্দ্র বাড়ানো
  • বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা
  • পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সুবিধা বৃদ্ধি

এই উদ্যোগগুলো মদিনার বাসিন্দাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যদিও মদিনা এখন স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে স্বীকৃত, তবুও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ও দ্রুত নগরায়নের প্রভাব মোকাবিলা। এগুলো মোকাবিলা করতে প্রযুক্তি, জনসচেতনতা ও সরকারি নীতিমালা গুরুত্ব বহন করবে।

মদিনার মতো শহরগুলোর জন্য আরও বেশি টেকসই উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে ভবিষ্যতে এই ধরনের শহরগুলোকে আরও ভালো করা সম্ভব।

মদিনার স্বাস্থ্যকর শহর স্বীকৃতি ও তার গুরুত্ব

মসজিদে নববীর পবিত্র শহর মদিনাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘স্বাস্থ্যকর শহর’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম স্বাস্থ্যকর শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে। সৌদি সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মদিনার উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ডব্লিউএইচও’র নির্ধারিত ৮০টি মানদণ্ড পূরণ করায় এই স্বীকৃতি লাভ করেছে শহরটি। এই পদক্ষেপ সৌদি আরবের অন্যান্য শহরগুলোর জন্যও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নয়নশীল ও টেকসই নগর গড়ে তোলার পথ সুগম করবে।

 MAH – 12112 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button